অপারেশন ডেভিল হান্ট: এক মাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

- Update Time : ১২:৩৫:০১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / 91
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অব্যাহত অবনতির মধ্যে সেনা-পুলিশের যৌথ উদ্যোগে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয় এক মাস আগে। সরকার দাবি করেছে যে, এই অভিযান দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু একটি মাসের অভিজ্ঞতায় সেই আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়ার কথা জানাচ্ছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং সাধারণ জনগণ।
অভিযানকে ঘিরে সৃষ্টি হওয়া সন্দেহ:
এতদিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি, বরং দিনে দিনে ঘটছে একাধিক গুরুতর অপরাধ। ডাকাতি, ছিনতাই, গণপিটুনি, ধর্ষণ, সন্ত্রাসী হামলা—এমনকি পুলিশের ওপরও হামলা দেখা গেছে। এই ঘটনাগুলি বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে উদ্বেগের মধ্যে ফেলেছে, যা পরিস্থিতির আরও অবনতির ইঙ্গিত দেয়। তাছাড়া, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরমপন্থিরা ক্রমশ তৎপর হয়ে উঠছে।
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ:
মানবাধিকার কর্মীরা মনে করছেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্টে’ যে সফলতার আশার কথা বলা হয়েছিল, তা এখনো পূর্ণ হয়নি। সার্বিকভাবে অভিযানে ফলাফল শূন্যই বলা চলে। একাধিক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে, জনগণ এবং মানবাধিকার কর্মীরা সন্দেহ করতে শুরু করেছেন—এই অভিযান আসলে কারা টার্গেট করছে।’’ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান এবং নূর খান উভয়েই অভিযানের সফলতা নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন।
ক্ষমতাচ্যুতদের গ্রেপ্তার:
বিশেষত, সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী আওয়ামি লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারের খবরে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, ‘এটি কি শুধুমাত্র ক্ষমতাচ্যুত নেতাকর্মীদের টার্গেট করে করা হচ্ছে?’ তবে সরকারের দাবি, গ্রেপ্তারকৃতরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার হয়েছে, এবং তাদের বিরুদ্ধে চলমান মামলা রয়েছে।
এদিকে, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু হওয়ার পর প্রথম থেকে ১১,০০০ এরও বেশি ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বিভিন্ন মামলা-ফৌজদারি তদন্তের মাধ্যমে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০,০০০ এর বেশি।
উল্লেখযোগ্য ঘটনায় এক নজর:
- আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা (৭ ফেব্রুয়ারি): দেশব্যাপী এই অভিযান শুরু হওয়ার আগে, ক্ষমতাচ্যুত মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল, যাতে একজন নেতাকর্মী মারা যান।
- মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ: গ্রেপ্তারের সময় এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে যে, হয়তো কেউ কেউ রাজনৈতিক কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দক্ষিণ অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতি:
ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়া অঞ্চলে সাম্প্রতিককালে চরমপন্থি গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা বাড়ায় এক নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে যে, এই অঞ্চলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সামগ্রিকভাবে অভিযান কতটা সফল?
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযানের এক মাস পর, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কিছুটা কঠিন হয়ে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা এবং নাগরিক সমাজের মতে, এই অভিযান এতটা ফলপ্রসূ হয়নি, যতটা সরকার বা প্রশাসন প্রত্যাশা করেছিল।
প্রশ্ন: ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’—সরকারের কি আসল উদ্দেশ্য?
সংক্ষেপে:
বিশেষ অভিযানকে কেন্দ্র করে এক মাসের মধ্যে দেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলো এবং জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং নজরদারি ছাড়া, এই অভিযানের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও সফলতা নিয়ে শঙ্কা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক গ্রেপ্তার নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে। দেশবাসী জানতে চায়, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে এবং কেন ক্ষমতাচ্যুতদেরই শুধু টার্গেট করা হচ্ছে?
নিউজ সোর্স – BBC বাংলা