শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততার অভিযোগ: গুম তদন্ত কমিশনের সুপারিশ কি কার্যকর হবে?

- Update Time : ১০:০৬:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪
- / 65
শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা: গুম তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদন কি বিচারিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে?
গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদ্য প্রকাশিত অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন বাংলাদেশের রাজনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতিতে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পাশাপাশি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়েছে।
কমিশনের প্রতিবেদন: অভিযোগ ও সুপারিশ
শনিবার (১১ ডিসেম্বর), কমিশন তাদের ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। এতে জানানো হয়, ১,৬৭৬টি অভিযোগের মধ্যে ৭৫৮টি অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়:
- গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা: কমিশনের ভাষ্যমতে, গুম কার্যক্রমে শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
- উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের জড়িত থাকা: প্রশাসনের প্রাক্তন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, এনটিএমসি-এর প্রাক্তন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান, এবং পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
- র্যাব বিলুপ্তি: গুমের ঘটনায় এই সংস্থার সম্পৃক্ততার কারণে কমিশন র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ করেছে।
গুমের ভয়াবহতা ও ভিকটিমদের ট্রমা
কমিশন প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, গুমের ঘটনা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে ভয়াবহ নির্যাতন করেছে। এর ফলে গুমের শিকার অনেকে এখনো মানসিক ট্রমায় ভুগছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিকটিমদের সুরক্ষা ও বিচার নিশ্চিত করার বিষয়ে উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতির পর অভিযোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
কমিশনের প্রস্তাবিত কার্যক্রম
কমিশনের প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে “আয়নাঘর” পরিদর্শনের আহ্বান জানান, যা ভিকটিমদের মধ্যে সাহস জাগাতে সহায়তা করবে।
প্রধান উপদেষ্টা কমিশনের এই আহ্বান গ্রহণ করেছেন এবং জানান, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তিনি আয়নাঘর পরিদর্শন করবেন। তিনি কমিশন সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের কাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেন।
সমস্যার গভীরতা: গুমের রাজনীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন
গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন নয়। তবে বর্তমান কমিশনের প্রতিবেদনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়টি পরিস্থিতিকে আরও গভীর সংকটে ফেলেছে।
এ প্রশ্নও উঠেছে, র্যাবের বিলুপ্তি কি এই সমস্যার সমাধান করতে পারবে? কমিশন প্রধানের মতে, তদন্ত সম্পূর্ণ করার জন্য আরও এক বছর সময় প্রয়োজন।
কি করা সম্ভব?
প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর একটি প্রশ্ন প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে—এটি কি বিচারিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে?
- সরকারের ভূমিকা: সরকারের উচিত এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বচ্ছ তদন্ত প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা।
- আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা: আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সহায়তা ও নজরদারি এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
- ভিকটিমদের সুরক্ষা: গুমের শিকার ব্যক্তিদের পুনর্বাসন এবং তাদের মানসিক ও শারীরিক ট্রমার চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি।
উপসংহার
গুম সংক্রান্ত এই তদন্ত কমিশনের কাজ এবং সুপারিশ বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা ও মানবাধিকার পুনঃস্থাপনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, বিচারিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত করা না গেলে এই প্রতিবেদন শুধু একটি নথি হিসেবেই থেকে যাবে।
এখন দেখার বিষয় হলো, সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি এই সুপারিশ বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেয়।