ডিফেন্ডার হয়েও তপু যেন স্ট্রাইকার: গোলের নেশায় এক অন্যরকম তপু বর্মণ

- Update Time : ০৪:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / 36
ডিফেন্ডারদের প্রধান কাজ গোল ঠেকানো। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্ডার তপু বর্মণ যেন এই ধারণাকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। শুধু প্রতিপক্ষের গোল থামিয়ে নয়, তিনি নিজেই গোল করেও হয়ে উঠেছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁর এই অভাবনীয় নৈপুণ্যের জন্য ভক্তরা তাঁকে ভালোবেসে ডাকেন ‘বাংলার রামোস’।
মৌসুমের সেরা শুরু
তপুর এই মৌসুমের যাত্রা শুরু হয় বসুন্ধরা কিংসের হয়ে চ্যালেঞ্জ কাপের ফাইনালে গোল দিয়ে। মোহামেডানের বিপক্ষে কিংসের ৩-১ জয়ের প্রথম গোলটি তাঁরই পা থেকে আসে। এরপর ফেডারেশন কাপে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে জয়সূচক গোল এবং পুলিশ এফসির বিপক্ষেও প্রথম গোল করে কিংসকে এগিয়ে নিয়ে যান।
প্রিমিয়ার লিগে ফর্টিস এফসির বিপক্ষে গোল করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন। রহমতগঞ্জ ও ওয়ান্ডারার্সের বিপক্ষেও গোল করে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেন। লিগে তিনটি, ফেডারেশন কাপে দুটি এবং চ্যালেঞ্জ কাপে একটি করে তপুর মোট গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬-এ। স্থানীয় খেলোয়াড়দের মধ্যে গোলের দিক দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে গেছেন শুধু পুলিশের আল-আমিন।
গোলের নেশা আর পরিশ্রমের গল্প
ডিফেন্ডার হলেও গোল করার ক্ষুধা তপুর মধ্যে ভীষণ প্রবল। তাঁর মতে, এই আত্মবিশ্বাস এসেছিল ২০১৩ সালে মোহামেডানের হয়ে শেখ রাসেলের বিপক্ষে প্রথম লেগের ম্যাচে ভলির মাধ্যমে করা সেই অসাধারণ গোল থেকে। ‘ডিফেন্ডার হলেও গোল করতে পারব’—এই বিশ্বাসটাও সেই দিন থেকেই দৃঢ় হয়েছিল।
২০১১ সালে ঢাকা মোহামেডানের হয়ে প্রিমিয়ার লিগে পথচলা শুরু তপুর। এরপর সাইফ স্পোর্টিং, আবাহনী লিমিটেড হয়ে এখন বসুন্ধরা কিংসে খেলে যাচ্ছেন। ক্লাব ক্যারিয়ারে এ পর্যন্ত ১৬টি গোল করেছেন। জাতীয় দলের হয়ে ৬০ ম্যাচে ৬ গোল। সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে গোল সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২-এ, যা বাংলাদেশের অনেক স্ট্রাইকারের জন্যও ঈর্ষণীয়।
স্মরণীয় গোল আর তিক্ত অভিজ্ঞতা
জাতীয় দলে তপুর প্রথম গোলটি আসে ২০১৫ সালে কেরালায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ভুটানের বিপক্ষে সেই গোল ছিল বাংলাদেশের ৩-০ জয়ের প্রথম গোল। ২০১৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর করা একমাত্র গোলেই জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ।
তবে তপু শুধু গোলের আনন্দেই থেমে থাকেননি। তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলিতে রয়েছে আত্মঘাতী গোলের হতাশাও। আবাহনীর বিপক্ষে এমনই এক ম্যাচে নিজের ভুলে দল পিছিয়ে পড়ে। কিন্তু পরে গোল করে সেই দুঃখ মিটিয়ে ম্যাচটি ড্র করান।
উচ্চতা আর টেকনিক—গোল করার হাতিয়ার
ছয় ফুট উচ্চতার সুবাদে হেডে গোল করার ক্ষেত্রে তপু বেশ পারদর্শী। গোল করার কৌশল তিনি শিখেছেন রজনী কান্ত বর্মণের কাছ থেকে। ‘মোহামেডানে খেলার সময় রজনীদার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। বিশেষ করে জাম্পিং হেড করার দক্ষতা।’
ডিফেন্ডার, তবে স্ট্রাইকারের মতোই কার্যকর
তপুর মতে, তিনি আসলে একজন ডিফেন্ডার। তবে দলের প্রয়োজনে গোল করার সুযোগ পেলে সেটিকে হাতছাড়া করেন না। ‘শেষ বাঁশির আগ পর্যন্ত হাল ছাড়ি না,’ বলেন তপু।
তপুর এই অধ্যবসায় আর অদম্য মানসিকতা তাঁকে শুধু ডিফেন্ডার নয়, এক কার্যকর স্ট্রাইকার হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভক্তরা তাই গর্ব নিয়ে বলেন—তপু বর্মণই আমাদের গর্ব, আমাদের ‘বাংলার রামোস’।
লেখক: ট্রেন্ডবিডিনিউজ স্পোর্টস টিম
প্রকাশিত: ২৭/১/২০২৫