বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপের সমাপ্তি: আখেরি মোনাজাতে লাখো মুসল্লির অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা

- Update Time : ০২:২৬:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 31
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ। রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১০ মিনিটে শুরু হয়ে ৯টা ৩৬ মিনিটে এ মোনাজাত শেষ হয়। বিশ্ব ইজতেমার এই আধ্যাত্মিক সমাপ্তি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, শান্তি ও কল্যাণ কামনায় পরিচালিত হয়, যেখানে লাখো মুসল্লি অশ্রুসিক্ত চোখে মহান আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেছেন।
আখেরি মোনাজাতের আবেগঘন মুহূর্ত
মোনাজাত পরিচালনা করেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা জুবায়ের আহমেদ। এ সময় মুসল্লিদের হৃদয়ে ছিল ধর্মীয় আবেগ, আল্লাহর রহমত লাভের প্রত্যাশা এবং মানবজাতির কল্যাণ কামনার আবেদন। ময়দানে উপচে পড়া ভিড়ের কারণে মুসল্লিদের অনেকে আশপাশের সড়ক, ভবনের ছাদ, নৌকা, ব্রিজ ও ফ্লাইওভার থেকে মোনাজাতে অংশ নেন।
তিন দিনের ইজতেমার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা
গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার প্রথম ধাপ শুরু হয়। এবারের ইজতেমার প্রথম ধাপে ৪১ জেলা ও ঢাকার একাংশের মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেছেন। ইসলামের দাওয়াত, ধর্মীয় শিক্ষা ও মানবতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এই ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেদের পরিশুদ্ধ করার সুযোগ পান।
দ্বিতীয় ধাপের প্রস্তুতি
আগামীকাল (৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় ধাপ, যেখানে ২২ জেলা ও ঢাকার বাকি অংশের মুসল্লিরা অংশ নেবেন। এরপর ৮ দিনের বিরতি দিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব, যা পরিচালনা করবেন মাওলানা সাদ অনুসারীরা। দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তি ঘটবে ১৬ ফেব্রুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে।
ইজতেমার ঐতিহ্য ও গুরুত্ব
বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম আয়োজন হয় ১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে। পরে চট্টগ্রামের হাজী ক্যাম্প ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জেও অনুষ্ঠিত হয়। তবে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ১৯৬৭ সাল থেকে এটি নিয়মিতভাবে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিশ্ব ইজতেমা শুধুমাত্র বাংলাদেশের নয়, এটি মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এতে অংশগ্রহণ করেন।
ইজতেমার পরিবহন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস সার্ভিস চালু করা হয়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী। পুরো ইজতেমা ময়দান ও সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় নজরদারি ক্যামেরা এবং কন্ট্রোল রুম।
উপসংহার
বিশ্ব ইজতেমা শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর সংহতি, আত্মশুদ্ধি ও দাওয়াতের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার এক মহান মঞ্চ। আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে লাখো মুসল্লির অশ্রুসিক্ত প্রার্থনা ইসলামি ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করেছে। আগত মুসল্লিরা এখান থেকে ধর্মীয় শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে গিয়ে শান্তির বার্তা প্রচার করবেন।