রমজানের আগে সয়াবিন তেলের সংকট: কারসাজি নাকি বাস্তব সংকট?

- Update Time : ১১:৩৬:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 44
ট্রেন্ড বিডি নিউজ ডেস্ক
আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। খুচরা বাজারে চাহিদামতো বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না, বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত তেলের সংকট প্রকট। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল মালিকরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
সরবরাহ সংকট নাকি কৌশল?
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২-৪ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারেও সরবরাহ কমে গেছে, ফলে খুচরা বাজারে চাহিদার তুলনায় তেল মিলছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলাররা পাঁচ কার্টন তেল অর্ডার করলেও মাত্র এক থেকে দুই কার্টন পাচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব
দেশে তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার ভ্যাট ছাড় দিয়েছে। তবে মিল মালিকরা এখন দাম বাড়ানোর জন্য পাঁয়তারা করছে। ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন জানুয়ারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে লিটারপ্রতি ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। যদিও ২৩ জানুয়ারির এক বৈঠকে তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের মতামতের জন্য একটি প্রতিবেদন চাওয়া হয়েছে, যা এখনো জমা পড়েনি।
দুই মাসেই আবার দাম বাড়ানোর চেষ্টা
মাত্র দুই মাস আগে, ৯ ডিসেম্বর, সরকার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়িয়ে ১৬৭ থেকে ১৭৫ টাকা করেছিল। খোলা সয়াবিন তেলের দামও ১৪৯ থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছিল। পাঁচ লিটারের বোতলের দাম ৮১৮ থেকে ৮৬০ টাকা করা হয়েছিল। এখন আবারও দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে।
সরকারের অবস্থান
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার রমজানে তেলের দাম বাড়াতে চায় না এবং এ কারণে রোজা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাট ছাড় অব্যাহত থাকবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব আবদুর রহিম খান স্পষ্ট জানিয়েছেন, তেলের দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এবং বর্তমান দরেই তেল বিক্রি করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত
এক সাম্প্রতিক অনুষ্ঠানে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশীরউদ্দিন বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকলেও দেশে দাম বাড়ানোর কোনো কারণ দেখি না।” নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, “দেশের বাজারে কয়েকটি বৃহৎ কোম্পানি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারব্যবস্থা চালু না হলে ভোক্তারা বারবার ভোগান্তির শিকার হবেন।”
উপসংহার
রমজানকে কেন্দ্র করে মিল মালিকরা যদি পরিকল্পিতভাবে তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে সরকারকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বাজারে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে, সাধারণ ভোক্তাদের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।