Dhaka ০৭:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম :

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%: অর্থনৈতিক সংকটের চিত্র

  • Update Time : ১২:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 42

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে ৭১ শতাংশেরও বেশি পতন ঘটেছে। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ ছিল, সেখানে এই বছর সেই পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। এই উল্লেখযোগ্য পতন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বিদেশি বিনিয়োগে এই বিপুল হ্রাস দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, বিদেশি বিনিয়োগের ধীর গতি এক দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দেশে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। আর স্থানীয় বিনিয়োগও তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অন্যতম। বর্তমানে নতুন বিনিয়োগের প্রবাহ একেবারেই কম, আর যারা আগেই বিনিয়োগ করেছে, তারা তাদের অবণ্টিত মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করেই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের মতে, দেশি বিনিয়োগের পরিবেশে উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর আশা করা কঠিন। দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। এই কারণে দেশে বড় আকারে বিদেশি বিনিয়োগ আসা দুরূহ হয়ে উঠেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তবে, এর মধ্যে নতুন বিনিয়োগ (ইকুইটি বিনিয়োগ) মাত্র ৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বিদেশি বিনিয়োগের তুলনায় একটি অতি নগণ্য অংশ।

প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার, এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এই পরিমাণ আরও কমে ৭ কোটি ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এফডিআই-এর বড় অংশই মূলত আগের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে আসে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সংকেত।

এই পরিস্থিতিতে, দেশের ব্যবসা পরিবেশে সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে সরকারের তৎপরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সরকার এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ নিয়ে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৭১%: অর্থনৈতিক সংকটের চিত্র

Update Time : ১২:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে ৭১ শতাংশেরও বেশি পতন ঘটেছে। গত বছরের একই সময়ে যেখানে ৭৪ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ ছিল, সেখানে এই বছর সেই পরিমাণ নেমে এসেছে মাত্র ২১ কোটি ৩০ লাখ ডলারে। এই উল্লেখযোগ্য পতন বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বড় সংকেত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বিদেশি বিনিয়োগে এই বিপুল হ্রাস দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর এক গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে জানিয়েছেন যে, বিদেশি বিনিয়োগের ধীর গতি এক দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ দেশে ব্যবসায় পরিবেশের উন্নতি তেমন দেখা যাচ্ছে না। আর স্থানীয় বিনিয়োগও তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না, যার ফলে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে কয়েকটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানিক দুর্বলতা অন্যতম। বর্তমানে নতুন বিনিয়োগের প্রবাহ একেবারেই কম, আর যারা আগেই বিনিয়োগ করেছে, তারা তাদের অবণ্টিত মুনাফা পুনর্বিনিয়োগ করেই পরিস্থিতি সামাল দিতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তাদের মতে, দেশি বিনিয়োগের পরিবেশে উন্নতি না হলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর আশা করা কঠিন। দেশের বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি যেখানে মাত্র ৭ শতাংশ, সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ছে। এই কারণে দেশে বড় আকারে বিদেশি বিনিয়োগ আসা দুরূহ হয়ে উঠেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে গড়ে প্রতি বছর প্রায় ১৫০ কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। তবে, এর মধ্যে নতুন বিনিয়োগ (ইকুইটি বিনিয়োগ) মাত্র ৬৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বিদেশি বিনিয়োগের তুলনায় একটি অতি নগণ্য অংশ।

প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) মোট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১৫ কোটি ডলার, এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) এই পরিমাণ আরও কমে ৭ কোটি ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। এফডিআই-এর বড় অংশই মূলত আগের বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভের পুনর্বিনিয়োগের মাধ্যমে আসে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের সংকেত।

এই পরিস্থিতিতে, দেশের ব্যবসা পরিবেশে সংস্কার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে সরকারের তৎপরতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি সরকার এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়, তবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ নিয়ে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে।