আয়নাঘর: বাংলাদেশের গুম ও নির্যাতনের অন্ধকার অধ্যায় উন্মোচন

- Update Time : ০৪:৪৯:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 28
বাংলাদেশে সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক ‘আয়নাঘর’ বিদ্যমান থাকার তথ্য উঠে এসেছে। এসব স্থানগুলো সম্পর্কে ইতোমধ্যেই শোনা গেছে নানা বিবরণ, তবে এখন পর্যন্ত এর প্রকৃত সংখ্যা ও অবস্থা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। গত বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি), অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব আয়নাঘর পরিদর্শন শেষে একাধিক গুরুতর মন্তব্য করেছেন।
অধ্যাপক ইউনূস জানান, “এ ধরনের টর্চার সেল বা ইন্টারোগেশন সেল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। আমি প্রথমে ধারণা করেছিলাম যে, কিছু কিছু জায়গায় আছেই হয়তো, কিন্তু এখন শুনলাম যে, আয়নাঘরগুলোর সংখ্যা প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ পর্যন্ত হতে পারে। এটি একটি অন্ধকার অধ্যায়, যার পুরো চিত্র এখনো প্রকাশ পায়নি।”
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, “এতে নিপীড়িতদের শিকার হয়ে যাওয়া মানুষদের মুখে শোনা অনেক ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে যা বিশ্বাস করতে অবিশ্বাস্য লাগে।” তিনি এই পরিস্থিতিকে এক ধরনের ‘আইয়ামে জাহেলিয়াত’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং পুরানো শাসনব্যবস্থাকে দায়ী করেন।
গত বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আয়নাঘর পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে, এখন পর্যন্ত ডিজিএফআই ও র্যাব-২ এর সিপিসি-৩ সেল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং এখন তারা র্যাব সদর দপ্তরের টাস্কফোর্স ইন্টেলিজেন্স সেন্টার পরিদর্শনে যাচ্ছেন।
এসব সেলের ভেতর অনেক ব্যক্তিকে গুম করে রাখা হতো। বিশেষ সূত্র অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাবেক সরকার ৬০৫ জনকে গুম করে রেখেছিল। অন্যদিকে, ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩৪৪ জন গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪০ জনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, এবং ৬৬ জন সরকারি হেফাজতে গ্রেপ্তার অবস্থায় ফিরে আসেন।
যেসব ব্যক্তিরা গুম হয়ে ফিরে এসেছেন, তারা তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে কষ্ট পেয়েছেন। ধারণা করা হয়, এই মানুষগুলোকে গুম করে রাখা হয়েছিল ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত জায়গাগুলোতে। এসব স্থানে বন্দী ছিলেন বিভিন্ন সঙ্গী, যেমন অধ্যাপক মোবাশার হাসান, সাবেক রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান, ব্যবসায়ী অনিরুদ্ধ কুমার রায়, মাইকেল চাকমা এবং মীর আহমদ বিন কাসেমসহ আরও অনেকে।
এখনও পর্যন্ত আয়নাঘরের রহস্য উন্মোচিত হয়নি, তবে এটি যে বাংলাদেশের জন্য এক ভয়াবহ ও অন্ধকার অধ্যায় ছিল, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই স্থানগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে, ভবিষ্যতে এর প্রকৃত চিত্র তুলে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।