Dhaka ০৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন, কিন্তু দাম ও সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত কৃষক

  • Update Time : ১০:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 25

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম না পাওয়া এবং সংরক্ষণের উচ্চ খরচের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকদের মতে, বীজ আলু প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে কিনে জমিতে রোপণ করার কারণে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ বর্তমানে বাজারে আলুর দাম মাত্র ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি। এতে বিঘাপ্রতি কৃষকদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

এদিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের সমস্যা আরও বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু তা ছাড়িয়ে ৬ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু দাম না পাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কৃষকরা আলু উত্তোলনে ব্যস্ত। অনেকে দেনা পরিশোধের জন্য জমি থেকেই প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য আলু বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা
বাহাগিলি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলু চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি ১০০ টাকা কেজি দরে সেভেন জাতের ১৪ বস্তা (৭০০ কেজি) আলু ৭০ হাজার টাকায় কিনে ৭৫ শতক জমিতে রোপণ করেছিলাম। বীজ, শ্রমিক, সার, কীটনাশকসহ আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন আলুর দাম কমে যাওয়ায় আমার ৮০ হাজার টাকা লোকসান হবে।”

একই গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, “আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এভাবে আমার প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।”

পানিয়ালপুকুর গ্রামের আলু চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। এবার ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু দাম না পাওয়ায় আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। হিমাগারে সংরক্ষণের খরচও আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও জানান, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে গেলে ৫০ কেজির একটি বস্তার জন্য মোট খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এর মধ্যে বস্তার দাম ৫৫ টাকা, প্রসেসিং খরচ ২০ টাকা, হিমাগারের ভাড়া প্রতি কেজি ৮ টাকা (৪০০ টাকা), এবং পরিবহন খরচ ৪০ টাকা।

কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, “এবার আলুর ফলন বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন আলু বিক্রি না করে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক বলেন, “কৃষকদের সমস্যা সমাধানে হিমাগার মালিকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সমাধানের পথ
কৃষকদের এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। হিমাগারের ভাড়া কমানো, আলুর ন্যূনতম ক্রয়মূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়ন করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলুর ন্যায্য মূল্য পাবেন।

কৃষকদের এই সংকট শুধু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নয়, সারা দেশের আলু চাষীদের জন্যই একটি সাধারণ সমস্যা। তাই এই সমস্যা সমাধানে জাতীয় পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র: স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অফিস।
প্রতিবেদক: ট্রেন্ড বিডিনিউজ।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন, কিন্তু দাম ও সংরক্ষণ নিয়ে চিন্তিত কৃষক

Update Time : ১০:১০:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে উৎপাদিত আলুর ন্যায্য দাম না পাওয়া এবং সংরক্ষণের উচ্চ খরচের কারণে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষকদের মতে, বীজ আলু প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে কিনে জমিতে রোপণ করার কারণে উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ বর্তমানে বাজারে আলুর দাম মাত্র ১৩ থেকে ১৫ টাকা কেজি। এতে বিঘাপ্রতি কৃষকদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে।

এদিকে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের সমস্যা আরও বেড়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ৬ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, কিন্তু তা ছাড়িয়ে ৬ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু দাম না পাওয়ায় কৃষকরা তাদের উৎপাদন খরচ তুলতে পারছেন না।

গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের কৃষকরা আলু উত্তোলনে ব্যস্ত। অনেকে দেনা পরিশোধের জন্য জমি থেকেই প্রতি কেজি আলু ১৩ টাকা দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ হিমাগারে সংরক্ষণের জন্য আলু বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

কৃষকদের দুঃখ-দুর্দশা
বাহাগিলি ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলু চাষী হাবিবুর রহমান বলেন, “আমি ১০০ টাকা কেজি দরে সেভেন জাতের ১৪ বস্তা (৭০০ কেজি) আলু ৭০ হাজার টাকায় কিনে ৭৫ শতক জমিতে রোপণ করেছিলাম। বীজ, শ্রমিক, সার, কীটনাশকসহ আমার মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এখন আলুর দাম কমে যাওয়ায় আমার ৮০ হাজার টাকা লোকসান হবে।”

একই গ্রামের কৃষক শামীম হোসেন বলেন, “আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এভাবে আমার প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।”

পানিয়ালপুকুর গ্রামের আলু চাষী সাইফুল ইসলাম বলেন, “প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমিতে আলু চাষ করি। এবার ১২ বিঘা জমিতে চাষ করেছি। কিন্তু দাম না পাওয়ায় আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি। হিমাগারে সংরক্ষণের খরচও আমার পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।” তিনি আরও জানান, হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে গেলে ৫০ কেজির একটি বস্তার জন্য মোট খরচ পড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। এর মধ্যে বস্তার দাম ৫৫ টাকা, প্রসেসিং খরচ ২০ টাকা, হিমাগারের ভাড়া প্রতি কেজি ৮ টাকা (৪০০ টাকা), এবং পরিবহন খরচ ৪০ টাকা।

কৃষি কর্মকর্তাদের প্রতিক্রিয়া
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, “এবার আলুর ফলন বেশি হওয়ায় দাম কমে গেছে। কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন আলু বিক্রি না করে হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। হিমাগারের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করব।”

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী হক বলেন, “কৃষকদের সমস্যা সমাধানে হিমাগার মালিকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সমাধানের পথ
কৃষকদের এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। হিমাগারের ভাড়া কমানো, আলুর ন্যূনতম ক্রয়মূল্য নিশ্চিত করা এবং কৃষকদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। এছাড়া আলু প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের উন্নয়ন করলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আলুর ন্যায্য মূল্য পাবেন।

কৃষকদের এই সংকট শুধু নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের নয়, সারা দেশের আলু চাষীদের জন্যই একটি সাধারণ সমস্যা। তাই এই সমস্যা সমাধানে জাতীয় পর্যায়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র: স্থানীয় কৃষক ও কৃষি অফিস।
প্রতিবেদক: ট্রেন্ড বিডিনিউজ।