Dhaka ০১:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম :

দায় নিবে কে তাহলে?

  • Update Time : ০৫:৩২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 34

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দায় এড়ানোর প্রবণতা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী যুবদল ঘোষণা দিয়েছে, তাদের কোনো নেতাকর্মী যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে দল তার দায় নেবে না—বরং কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন স্পষ্ট করেছেন, কেউ বেআইনি কাজে জড়ালে তাকে বহিষ্কার করা হবে, এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, দায় নিবে কে তাহলে?

শুধু বহিষ্কারই কি যথেষ্ট?
রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের নেতাকর্মীদের লালন-পালন করে, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় রাখে। কিন্তু যখন তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তখন সংগঠন নিজেকে দায়মুক্ত রাখতে “বহিষ্কার” নামক পথটি বেছে নেয়। এটি কি আসলে দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল নয়?

যেমন, যুবদল জানিয়েছে—গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার যুবদল সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সংগঠন তাকে বহিষ্কার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—যখন তিনি সংগঠনের ছত্রছায়ায় ছিলেন, তখন কি তার কার্যকলাপ নজরদারিতে ছিল না? তার অপকর্ম থামানোর কোনো উদ্যোগ কি সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল?

রাজনীতির দ্বৈত নীতি
বিএনপি বা যুবদল একা নয়—বাংলাদেশের প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলই এই দ্বৈত নীতির চর্চা করে। যখন তাদের কর্মী কোনো ইতিবাচক কাজে জড়িত হয়, তখন দল তাকে পুরস্কৃত করে, নেতার আসনে বসায়। কিন্তু যখন সে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তখন দল দূরত্ব বজায় রেখে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।

এতে প্রশ্ন ওঠে—যে কর্মীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বড় করা হলো, যারা নেতাদের নির্দেশে মাঠে সক্রিয় ছিল, তাদের কর্মকাণ্ডের দায় দলের নয় কেন? শুধু বহিষ্কার করে কি দায় শেষ হয়ে যায়?

জনগণের আস্থাহীনতা
এমন অবস্থানের কারণে জনগণের মনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা থাকলে তাদের কর্মীদের রক্ষা করে, আর সমস্যা হলে দায় ঝেড়ে ফেলে। ফলে দলীয় অনুগতরা যে কোনো অপরাধে জড়ানোর আগে জানে, দল যদি পাশে না-ও থাকে, কমপক্ষে দায়ও নেবে না—শুধু বহিষ্কারই হবে শেষ পদক্ষেপ।

সত্যিকারের পরিবর্তন দরকার
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হলে শুধু বহিষ্কার করলেই চলবে না। দলগুলোর উচিত—

  • অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই কঠোর নজরদারি করা।
  • দলের নীতির বিপরীতে কাজ করা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
  • নিজেদের দায় এড়ানোর বদলে সাংগঠনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

অন্যথায়, বহিষ্কার আর দায় এড়ানোর এই খেলা চলতেই থাকবে। কিন্তু দেশের জনগণ কি আর এসব মেনে নেবে?

দায় নিবে কে তাহলে?

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

দায় নিবে কে তাহলে?

Update Time : ০৫:৩২:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দায় এড়ানোর প্রবণতা নতুন কিছু নয়। সম্প্রতি জাতীয়তাবাদী যুবদল ঘোষণা দিয়েছে, তাদের কোনো নেতাকর্মী যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, তাহলে দল তার দায় নেবে না—বরং কঠোর ব্যবস্থা নেবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন স্পষ্ট করেছেন, কেউ বেআইনি কাজে জড়ালে তাকে বহিষ্কার করা হবে, এমনকি তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হলো, দায় নিবে কে তাহলে?

শুধু বহিষ্কারই কি যথেষ্ট?
রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে তাদের নেতাকর্মীদের লালন-পালন করে, ক্ষমতার ছত্রছায়ায় রাখে। কিন্তু যখন তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়ায়, তখন সংগঠন নিজেকে দায়মুক্ত রাখতে “বহিষ্কার” নামক পথটি বেছে নেয়। এটি কি আসলে দায়িত্ব এড়ানোর কৌশল নয়?

যেমন, যুবদল জানিয়েছে—গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার যুবদল সদস্য জাহাঙ্গীর আলম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। সংগঠন তাকে বহিষ্কার করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—যখন তিনি সংগঠনের ছত্রছায়ায় ছিলেন, তখন কি তার কার্যকলাপ নজরদারিতে ছিল না? তার অপকর্ম থামানোর কোনো উদ্যোগ কি সংগঠনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল?

রাজনীতির দ্বৈত নীতি
বিএনপি বা যুবদল একা নয়—বাংলাদেশের প্রায় সব বড় রাজনৈতিক দলই এই দ্বৈত নীতির চর্চা করে। যখন তাদের কর্মী কোনো ইতিবাচক কাজে জড়িত হয়, তখন দল তাকে পুরস্কৃত করে, নেতার আসনে বসায়। কিন্তু যখন সে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, তখন দল দূরত্ব বজায় রেখে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে।

এতে প্রশ্ন ওঠে—যে কর্মীদের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বড় করা হলো, যারা নেতাদের নির্দেশে মাঠে সক্রিয় ছিল, তাদের কর্মকাণ্ডের দায় দলের নয় কেন? শুধু বহিষ্কার করে কি দায় শেষ হয়ে যায়?

জনগণের আস্থাহীনতা
এমন অবস্থানের কারণে জনগণের মনে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা থাকলে তাদের কর্মীদের রক্ষা করে, আর সমস্যা হলে দায় ঝেড়ে ফেলে। ফলে দলীয় অনুগতরা যে কোনো অপরাধে জড়ানোর আগে জানে, দল যদি পাশে না-ও থাকে, কমপক্ষে দায়ও নেবে না—শুধু বহিষ্কারই হবে শেষ পদক্ষেপ।

সত্যিকারের পরিবর্তন দরকার
রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন আনতে হলে শুধু বহিষ্কার করলেই চলবে না। দলগুলোর উচিত—

  • অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই কঠোর নজরদারি করা।
  • দলের নীতির বিপরীতে কাজ করা নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।
  • নিজেদের দায় এড়ানোর বদলে সাংগঠনিক জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

অন্যথায়, বহিষ্কার আর দায় এড়ানোর এই খেলা চলতেই থাকবে। কিন্তু দেশের জনগণ কি আর এসব মেনে নেবে?

দায় নিবে কে তাহলে?