অপারেশন ডেভিল হান্ট: এক মাস পরও অস্থিরতা, কার টার্গেট?

- Update Time : ০২:০৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / 83
বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে গত এক মাস ধরে চলছে সেনা-পুলিশের যৌথ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। ৮ মার্চ এই অভিযানের এক মাস পূর্ণ হলেও, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বরং, অভিযান চলাকালীন সময়ে ডাকাতি, ছিনতাই, গণপিটুনি, ধর্ষণ, বাড়িঘরে হামলা, এমনকি পুলিশের ওপর হামলার মতো ঘটনাগুলো থামার বদলে বেড়েই চলেছে। এছাড়াও, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া অঞ্চলে চরমপন্থীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক আরও গভীর হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, অপারেশন ডেভিল হান্টের প্রথম মাসে আশানুরূপ সাফল্য দেখা যায়নি। মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, “সার্বিক মূল্যায়নে অভিযানটিকে এখন পর্যন্ত খুব একটা সফল বলা যাচ্ছে না। সফলতা যেভাবে আশা করা হয়েছিল, সেভাবে হচ্ছে না।” একইভাবে, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমানও অভিযানের ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “এসব ঘটনায় কমে আসার পরিবর্তে মানুষের মধ্যে উদ্বেগ-আতঙ্ক অনেকক্ষেত্রে আরও বেড়েছে।”
অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের একটি বড় অংশই গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। এই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে যে, অভিযানের মূল টার্গেট কি ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা? তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির সদস্য সচিব আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, “অন্যায়ভাবে কাউকে ধরা হয়নি। যার নামে মামলা আছে, তাকে তো অবশ্যই ধরতে হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “তারা (আওয়ামী লীগ) যে ষড়যন্ত্র করছে, এটা তো স্পষ্ট। তারা ডেভিল অ্যাক্টিভিজম করছে বলেই তো ডেভিল হান্টের প্রয়োজন পড়লো।”
উল্লেখ্য, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় নেতাকর্মীরা গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায় একজন নিহতও হন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই এই হামলা চালিয়েছিল। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের দাবির মুখে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’।
এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছে। একই সময়ে নতুন ও পুরাতন বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছে অন্তত ২০ হাজার মানুষ। তবে, অভিযানের কার্যকারিতা ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায়, অভিযানের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হচ্ছে।
অভিযানের এক মাস পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায়, সাধারণ মানুষের মধ্যে হতাশা ও ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্টের সাফল্য নির্ভর করছে, এটি কতটা ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে তার ওপর। অভিযানের নামে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন না হয়ে, প্রকৃত অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তবেই এটি জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হবে।