বাংলাদেশ বড় ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে: বিশেষজ্ঞদের হুঁশিয়ারি

- Update Time : ০৯:৪০:০৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ মার্চ ২০২৫
- / 32
গত ১০ দিনে বাংলাদেশে চার দফা ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, যা দেশটিকে বড় ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রাখছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় ধরনের ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনের কারণে দেশটি বড় মাত্রার ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ভূমিকম্পের বর্তমান অবস্থা:
গতকাল বুধবার সকাল ১১টা ৩৬ মিনিটে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫.৬। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজধানী ইম্ফলের ইয়ারিপক এলাকায়, ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ কিলোমিটার গভীরতায়। ঢাকা থেকে এর দূরত্ব ছিল ৪৪৯ কিলোমিটার।
ভূমিকম্পের সংখ্যা বৃদ্ধি:
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে ও আশপাশের এলাকায় ২৮টি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪১টি এবং ২০২৪ সালে তা আরও বেড়ে ৫৩টিতে পৌঁছেছে। এটি গত আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, “ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। আমাদের ভূতাত্ত্বিক অবস্থান অনুযায়ী, ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সময় হয়ে গেছে। তবে কখন এটি হবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।”
ঢাকার অবস্থা উদ্বেগজনক:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একজন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বলেন, “পার্বত্য সীমান্ত ও সিলেট অঞ্চলের ভূ-অভ্যন্তরে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো শক্তি জমে আছে। যদি এমন ভূমিকম্প হয়, তাহলে সিলেট, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও ময়মনসিংহসহ জনবহুল শহরগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে।”
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রস্তুতির অভাব:
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (২০২১-২০২৫) অনুযায়ী, বাংলাদেশে যদি বড় মাত্রার ভূমিকম্প হয়, তাহলে সারা দেশে ৬ কোটি ১২ লাখ মানুষ ক্ষতির মুখে পড়বে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রস্তুতি এখনও অপর্যাপ্ত। ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার কার্যক্রমের প্রস্তুতি থাকলেও ভূমিকম্প প্রতিরোধ ও নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এখনও অনেক কাজ বাকি।
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলোর ওপর জোর দিচ্ছেন:
১. ভবন নির্মাণে কঠোর মানদণ্ড: ভূমিকম্প সহনশীল ভবন নির্মাণের জন্য কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
২. নাগরিক সচেতনতা: ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে, তা নিয়ে নিয়মিত মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৩. দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা: ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া।
৪. গবেষণা ও পর্যবেক্ষণ: ভূমিকম্পের পূর্বাভাস ও ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার।
শেষ কথা:
বাংলাদেশ ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে, এবং এই ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস হতে পারে। তাই সরকার, বিশেষজ্ঞ ও নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ভূমিকম্পের ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া এখনই সময়ের দাবি। নাগরিক সচেতনতা, ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামো নির্মাণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারই পারে ভূমিকম্পের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে।