Dhaka ০৯:২২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শিরোনাম :

বাংলাদেশে প্রথম স্কিন ব্যাংক: দগ্ধ রোগীদের জন্য নতুন আশার আলো

  • Update Time : ০১:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 88

ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ, প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্কিন ব্যাংক’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। ইতোমধ্যে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া ব্যবহার করে দুইজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্কিন ব্যাংক’ চালু করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ গুরুতর দগ্ধ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার পথ সুগম করবে।

স্কিন ব্যাংকের সফলতা

বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩ তলার সি-১৩৩৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদার শরীরে ৩৫২.৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার মা রাবেয়া বেগম জানান, গত ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে তার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকরা স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করলে তার সংক্রমণ কমতে শুরু করে।

একইভাবে ৮ বছর বয়সি মরিয়মের শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া দিয়ে। তার মা মজেমা বেগম জানান, গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং দ্রুত নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা করে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।

কীভাবে চামড়া দান করা যাবে?

স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান জানান, সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এতে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয় এবং বিশেষ ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। ১৪ দিনের মধ্যে দাতার শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।

মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, ‘চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দান করা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন পুরোপুরি নিরাপদ।’

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯ নম্বর কক্ষে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। পর্যাপ্ত দাতার অংশগ্রহণ থাকলে এটি দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

বাংলাদেশে প্রথম স্কিন ব্যাংক: দগ্ধ রোগীদের জন্য নতুন আশার আলো

Update Time : ০১:৩৮:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

ঢাকা, ১৭ ফেব্রুয়ারি: গুরুতর দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বাংলাদেশ, প্রথমবারের মতো চালু হলো ‘স্কিন ব্যাংক’। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি দেশের চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। ইতোমধ্যে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া ব্যবহার করে দুইজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার ফলে তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘স্কিন ব্যাংক’ চালু করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান। চিকিৎসকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ গুরুতর দগ্ধ রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে দ্রুত সুস্থ হওয়ার পথ সুগম করবে।

স্কিন ব্যাংকের সফলতা

বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩ তলার সি-১৩৩৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন দুই বছরের শিশু হামিদার শরীরে ৩৫২.৫ সেন্টিমিটার চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার মা রাবেয়া বেগম জানান, গত ২২ ডিসেম্বর গরম পানিতে পুড়ে তার শরীরের ৪২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। চিকিৎসকরা স্কিন ব্যাংক থেকে সংগৃহীত চামড়া প্রতিস্থাপন করলে তার সংক্রমণ কমতে শুরু করে।

একইভাবে ৮ বছর বয়সি মরিয়মের শরীরের ৭৭৯ সেন্টিমিটার পোড়া অংশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে স্কিন ব্যাংকের সংরক্ষিত চামড়া দিয়ে। তার মা মজেমা বেগম জানান, গ্যাসের চুলার আগুনে পুড়ে শরীরের ২২ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। চামড়া প্রতিস্থাপনের পর তার অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

স্কিন ব্যাংক কীভাবে কাজ করে?

বার্ন ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান বলেন, ‘গুরুতর দগ্ধ হলে শরীর থেকে পানি, লবণ, প্রোটিন ও তাপ দ্রুত বেরিয়ে যায়। যদি পোড়ার পরিমাণ বেশি হয় এবং রোগীর শরীর থেকে চামড়া নেওয়া সম্ভব না হয়, তখন স্কিন ব্যাংক থেকে সংরক্ষিত চামড়া প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে রোগীর মৃত্যুঝুঁকি কমে এবং দ্রুত নতুন চামড়া তৈরি হতে সহায়তা করে।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্কিন ব্যাংক একটি স্বীকৃত চিকিৎসা পদ্ধতি। সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভারতে এটি দীর্ঘদিন ধরে চালু রয়েছে।

কীভাবে চামড়া দান করা যাবে?

স্কিন ব্যাংকের কো-অর্ডিনেটর ডা. মাহবুব হাসান জানান, সুস্থ ব্যক্তি জীবদ্দশায় একাধিকবার চামড়া দান করতে পারেন। এতে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে শরীরের নির্দিষ্ট অংশ অবশ করা হয় এবং বিশেষ ডার্মাটম যন্ত্রের সাহায্যে চামড়া সংগ্রহ করা হয়। ১৪ দিনের মধ্যে দাতার শরীরে নতুন চামড়া তৈরি হয়ে যায়।

মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ৬ থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব, যদি লাশ সংরক্ষিত থাকে। সাধারণত পিঠ ও পা থেকে চামড়া সংগ্রহ করা হয়।

জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক ডা. মারুফুল ইসলাম জানান, ‘চামড়া দানে আইনগত কোনো বাধা নেই। স্কিন ব্যাংকের মাধ্যমে দান করা চামড়া সংরক্ষণ ও প্রতিস্থাপন পুরোপুরি নিরাপদ।’

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

স্কিন ব্যাংকের ইনচার্জ তামান্না সুলতানা জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটের ১২৩৯ নম্বর কক্ষে স্কিন ব্যাংক স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে উন্নত প্রযুক্তির ৮টি বিশেষ ফ্রিজের মাধ্যমে চামড়া সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে স্কিন ব্যাংকের কার্যক্রম আরও বিস্তৃত হলে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা অনেক সহজ হবে। পর্যাপ্ত দাতার অংশগ্রহণ থাকলে এটি দগ্ধ রোগীদের সুস্থতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।