বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংঘাত: ‘হয় আমরা থাকব, না হয় আওয়ামী লীগ থাকবে’

- Update Time : ০৯:২৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 32
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ঘোষণায় বলেছেন, “বিপ্লবী ভাইয়ের শাহাদাত আমাদের ব্যর্থতা। আমরা এতদিন সুবিচার নিশ্চিত করতে পারিনি, আমরা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি। এই ভূখণ্ডে হয় আমরা থাকব, না হয় আওয়ামী লীগ থাকবে।”
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ ও কফিন মিছিল
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাত সোয়া ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গাজীপুরে হামলায় নিহত শিক্ষার্থী আবুল কাশেমের জানাজা শেষে লাশের কফিন নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এই সময় বক্তারা আওয়ামী লীগের নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আজ আয়না ঘর প্রকাশিত হয়েছে, আজকেই জাতিসংঘের অভ্যুত্থানবিষয়ক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আর আজকেই আমাদের ভাই শহীদ হয়েছেন। বিপ্লবী ভাইয়ের শাহাদাত আমাদের ব্যর্থতা। আমরা সুবিচার আনতে পারিনি, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে পারিনি।”
‘বিপ্লবীরা ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে থাকতে পারে না’
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্টের পর এ ভূখণ্ডের দখল আমরা পেয়েছি। এ ভূখণ্ডে হয় আমরা থাকব, না হলে আওয়ামী লীগ থাকবে। বিপ্লবীরা ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে এ দেশে থাকতে পারে না। আমরা স্পষ্টভাবে সরকারকে বলতে চাই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতাকর্মীর শাস্তি নিশ্চিত করুন এবং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করুন।”
কফিন মিছিলে ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ
কফিন মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন:
- “দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”
- “আওয়ামী লীগের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”
- “আমার ভাই কফিনে, খুনি কেন বাহিরে”
- “ছাত্র-জনতার অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন”
- “হৈ হৈ রৈ রৈ, খুনি হাসিনা গেলি কই”
- “মুজিববাদ মুর্দাবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ”
- “আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না”
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, “গাজীপুরে অভ্যুত্থানের ছয় মাস পর আমাদের ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করা হলো। আমরা কিছুই করতে পারলাম না। লাশ সামনে নিয়ে বিগত দিনের ফ্যাসিবাদকে মনে পড়ছে। যে আওয়ামী লীগ আমার ভাইকে হত্যা করেছে, তারা এ দেশে রাজনীতি করার বিন্দুমাত্র অধিকার রাখে না। শহীদের লাশের শপথ করে বলছি, শরীরের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাব।”
আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
কাশেমের মৃত্যুর ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
- সারা দেশের জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে শহীদ আবুল কাশেমের গায়েবানা জানাজা
- আওয়ামী লীগের বিচার ও নিষিদ্ধের দাবিতে খাটিয়া মিছিল
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, গত বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্রনেতৃত্বাধীন প্রতিবাদে নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নে ১,৪০০ জন পর্যন্ত নিহত হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে উঠছে এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।