Dhaka ০৯:১৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শিরোনাম :

ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি: বেসরকারি বিনিয়োগে মন্থর গতি

  • Update Time : ০৮:০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 97

২০২৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তরল সম্পদ ৫১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা বেড়ে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এই সময়ে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত নগদ সম্পদ ২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা কমে ১৭ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধির কারণ
ব্যাংকাররা বলছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের একটি বড় অংশ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে, যা স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) পূরণের জন্য বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট আমানতের ৪ শতাংশ নগদ আকারে সিআরআর এবং ১৩ শতাংশ নগদ আকারে এসএলআর জমা রাখতে হয়।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭.২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এই সময়ে ব্যাংকগুলো সরকারি সিকিউরিটিজে বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া, নতুন বিনিয়োগের অভাব এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ধস
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ৩৮ বেসিস পয়েন্ট কম। নভেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭.৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল, যা অক্টোবরের তুলনায় ৬৬ বেসিস পয়েন্ট কম। জুলাই থেকে ধীরে ধীরে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাইয়ে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে পতন
রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, চলতি অর্থবছরে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নতুন বিনিয়োগ না বাড়ায় ব্যাংকগুলো তাদের অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকগুলোতে ডলারের প্রবাহ ভালো রয়েছে এবং ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মোটামুটি ভালো চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ বেড়ে ৩৪.৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৭.৬৬ শতাংশ কমেছে।

অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ
অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, ঋণের সুদ হার কমানো এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি: বেসরকারি বিনিয়োগে মন্থর গতি

Update Time : ০৮:০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

২০২৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তরল সম্পদ ৫১ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা বেড়ে ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছিল ১ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। তবে এই সময়ে ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত নগদ সম্পদ ২ হাজার ২৯১ কোটি টাকা কমে ১৭ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায় নেমে এসেছে।

অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধির কারণ
ব্যাংকাররা বলছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের একটি বড় অংশ সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে, যা স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও (এসএলআর) এবং ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) পূরণের জন্য বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের মোট আমানতের ৪ শতাংশ নগদ আকারে সিআরআর এবং ১৩ শতাংশ নগদ আকারে এসএলআর জমা রাখতে হয়।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭.২৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এক বছর আগে ১০ শতাংশের বেশি ছিল। এই সময়ে ব্যাংকগুলো সরকারি সিকিউরিটিজে বেশি বিনিয়োগ করেছে, যা অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঋণের চাহিদা কমে যাওয়া, নতুন বিনিয়োগের অভাব এবং সরকারি ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়ার কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমেছে।

বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ধস
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ৭.২৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা নভেম্বরের তুলনায় ৩৮ বেসিস পয়েন্ট কম। নভেম্বরে এই প্রবৃদ্ধি সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৭.৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল, যা অক্টোবরের তুলনায় ৬৬ বেসিস পয়েন্ট কম। জুলাই থেকে ধীরে ধীরে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমার এই ধারা অব্যাহত রয়েছে। জুলাইয়ে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.১৩ শতাংশ।

মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে পতন
রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, চলতি অর্থবছরে দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি ও মেশিনারি আমদানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। নতুন বিনিয়োগ না বাড়ায় ব্যাংকগুলো তাদের অর্থ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে। তবে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকগুলোতে ডলারের প্রবাহ ভালো রয়েছে এবং ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি মোটামুটি ভালো চলছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ঋণপত্র (এলসি) খোলার পরিমাণ বেড়ে ৩৪.৮৯ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার। তবে এই সময়ে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি ২৭.৬৬ শতাংশ কমেছে।

অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ
অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, ঋণের সুদ হার কমানো এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতের অতিরিক্ত তারল্য বৃদ্ধি এবং বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।