বাজারে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট: সারজিস আলমের সতর্কবার্তা

- Update Time : ০৭:০১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 35
বর্তমানে দেশের বাজার ব্যবস্থায় যেভাবে সমঝোতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে কার্যক্রম চলছে, তাতে প্রকৃত প্রতিযোগিতা বা মুক্ত বাজার ব্যবস্থা ধীরগতিতে পরিণত হয়েছে। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলি যেখানে একে অপরের প্রতিযোগী হওয়ার কথা, সেখানে তারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বাজারের সীমানা নির্ধারণ করছে। এর ফলে আমদানি বাণিজ্যের বড় অংশ কিছু প্রতিষ্ঠানদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে, যা ছোট বা মাঝারি আমদানিকারকদের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘খাদ্যপণ্যের যৌক্তিক দাম: বাজার তত্ত্বাবধানের কৌশল অনুসন্ধান’ শীর্ষক নীতি সংলাপে নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম এসব মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানটি বণিক বার্তা আয়োজন করেছিল এবং এতে আলোচক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন তিনি।
মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ
সারজিস আলম বলেন, “বর্তমানে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে সমঝোতা এবং সহযোগিতার ধারা গড়ে উঠেছে। বড় ব্যবসায়ীরা এমনকি ছোট ব্যবসায়ীদের আমদানি, পরিমাণ এবং বাজার নির্ধারণে প্রভাব ফেলছে। এতে বাজারে মুক্ত প্রতিযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে এবং কেবল কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।”
চাঁদাবাজি এবং সিন্ডিকেটের ছায়া
তবে, তিনি শুধু বাজারের সমঝোতা এবং নিয়ন্ত্রণের কথা বলেই থেমে যাননি। তিনি আরও জানান, বাজারে এখনও চাঁদাবাজি এবং সিন্ডিকেটের প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। রাজধানীর বড় পাইকারি বাজারগুলোর উদাহরণ দিয়ে সারজিস আলম বলেন, “আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখানে চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের দাম অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।” তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোও এসব সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত, যা বাজার ব্যবস্থায় সুস্থ ধারার প্রবাহ ফিরিয়ে আনার পথে একটি বড় বাধা।
রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও বাস্তবতার প্রয়োজন
সারজিস আলম বলেছেন, “বাজার ব্যবস্থায় সুস্থ ধারার প্রবাহ ফিরিয়ে আনার জন্য রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সকলের একত্রিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন ছাড়া বাজারে প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।” তিনি আরও জানান, ব্যবসায়ী সমাজ এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নির্দিষ্ট ভূমিকা নিয়ে কাজ করতে হবে।
আইনগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা
সারজিস আলম পরবর্তী সময়ে বর্তমান সরকারের প্রতি তার হতাশা ব্যক্ত করেন এবং বলেন, “অনেক সেমিনার ও ফোরামে আমরা যে ভালো কিছু শোনার আশা করি, তা বাস্তবায়নে দেখা যায় না। সরকার থেকে কঠোর আইন ও প্রয়োগের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।” তিনি মনে করেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা হয়তো সমাজের প্রতি আশাবাদী, তবে বাস্তবে সবকিছু এমন সহজে পরিবর্তন সম্ভব নয়।
এ ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে সারজিস আলম একদিকে যেমন বাজার ব্যবস্থায় সুস্থ প্রতিযোগিতা এবং পরিবর্তনের কথা বলেছেন, তেমনি সরকারের এবং রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছার ওপরও জোর দিয়েছেন।