ঢাকার বায়ুদূষণ: স্বাস্থ্যঝুঁকি ও প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ

- Update Time : ১১:০৫:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 28
ঢাকা, বাংলাদেশের রাজধানী, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এক অন্যতম দূষিত শহর হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তবে এবার শীত শুরুর আগেই ঢাকা শহরের বায়ুর মান মারাত্মকভাবে খারাপ হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত এক বছরে বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ শতাংশের বেশি, যা উদ্বেগজনক। এমন পরিস্থিতি স্বাস্থ্যের জন্য গভীর ঝুঁকি তৈরি করেছে, বিশেষত শিশু, বৃদ্ধ এবং দরিদ্র জনগণদের জন্য।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে বায়ুদূষণের কারণে, এবং এদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের। ঢাকায় বায়ুদূষণের মূল কারণ হিসেবে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, যানবাহন, কলকারখানার নির্গমন, এবং ইটভাটার বায়ু দূষণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই দূষণ শুধু শ্বাসতন্ত্রের রোগের সৃষ্টি করে না, পাশাপাশি মানসিক সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে, যার মধ্যে ডিপ্রেশন, ডিমেনশিয়া এবং সিজোফ্রেনিয়া অন্তর্ভুক্ত।
ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণসমূহ
- যানবাহনের দূষণ: অবৈধভাবে চলাচলকারী গাড়ি, পুরনো মোটরযান এবং কালো ধোঁয়া নির্গত করা যানবাহন বায়ুদূষণের প্রধান কারণ।
- শিল্পকারখানার নির্গমন: কলকারখানা থেকে নির্গত দূষিত গ্যাস এবং রাসায়নিক পদার্থ বায়ু দূষণের মূল উৎস।
- ইটভাটা: ইটভাটার সৃষ্ট সূক্ষ্ম বস্তুকণা (PM2.5) ঢাকার বায়ুতে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
- বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা: রাস্তায় ময়লা-আবর্জনা এবং পোড়ানো বর্জ্য বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ায়।
স্বাস্থ্যগত প্রভাব
বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, স্ট্রোক, হার্ট ফেইলিওর, COPD, এবং ফুসফুস ক্যানসারের মতো গুরুতর রোগের সৃষ্টি হয়। WHO-এর তথ্যানুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে প্রায় ২০% স্ট্রোক, ২১% নিউমোনিয়া, ৩৪% হৃদরোগ এবং ৭% ফুসফুস ক্যানসারের মতো রোগে মৃত্যু হয়।
এছাড়া, বায়ুদূষণের কারণে মানসিক সমস্যা যেমন ডিপ্রেশন, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া এবং ডিমেনশিয়া বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাতাসে বেনজিন ও কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতি সিজোফ্রেনিয়া রোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
বায়ুদূষণ রোধে করণীয় পদক্ষেপ
- পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ব্যবহার: সিসামুক্ত পেট্রোলিয়াম ব্যবহার এবং সিএনজি গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি।
- যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণ: পুরনো ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা এবং নতুন মোটরযানে ক্যাটালাইটিক কনভার্টার সংযোজন বাধ্যতামূলক করা।
- শিল্পকারখানার দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কলকারখানার নির্গমন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
- ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা: ব্যক্তিগত যানবাহন কমিয়ে যৌথ ব্যবহারের গাড়ির সংখ্যা বাড়ানো।
- গ্রিন ইনিশিয়েটিভ: রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপণ এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
- ইটভাটা উন্নয়ন: আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ইটভাটার দূষণ কমানো।
সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগ
বায়ুদূষণের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। নাগরিকদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব আচরণ গড়ে তুলতে হবে এবং আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। যদি আমরা সবাই সচেতন না হই, তবে ঢাকা শহর শীঘ্রই বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠবে।
ঢাকার বায়ুদূষণ শুধু পরিবেশের ক্ষতি নয়, এটি আমাদের স্বাস্থ্যকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। তাই সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে এবং পরিবেশ রক্ষায় সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে।