মিরপুর সড়ক অবরোধ: গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবিতে উত্তাল আন্দোলন

- Update Time : ০৩:২৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 66
রাজধানী ঢাকার মিরপুর সড়ক আজ রোববার সকালে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, যখন জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানে আহত বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সড়ক অবরোধ করেন। তাঁদের মূল দাবি হচ্ছে সুচিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। এই প্রতিবাদ কর্মসূচি বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে, এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, যদি এই সময়ের মধ্যে তাঁদের দাবি মেনে না নেওয়া হয়, তবে তাঁরা সচিবালয়ের দিকে যেতে বাধ্য হবেন।
এদিন সকালে আগারগাঁও ও দুপুরে মিরপুর সড়কে শুরু হওয়া প্রতিবাদ মিছিলের মধ্যে সোহেলী নামে এক নারী উপস্থিত ছিলেন, যিনি এই কর্মসূচির ঘোষক। এরই মধ্যে শ্যামলীতে এক ব্যক্তির গলায় রশি দেখা গেছে এবং তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি ৪টা পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না মেলে, তবে আত্মহত্যা করবেন। এ ঘটনায় আন্দোলনকারীদের ক্ষোভ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
আন্দোলনের পেছনে অবহেলিত স্বাস্থ্যের সমস্যা
প্রতিবাদকারীরা যে চিকিৎসা ও রাষ্ট্রীয় সম্মাননার দাবি জানাচ্ছেন, তা একদম বৈধ। গণ-অভ্যুত্থানে আহত এসব ব্যক্তির শারীরিক আঘাতের পর, তারা আশানুরূপ চিকিৎসা পাচ্ছেন না, এমনটাই তাঁদের অভিযোগ। বিশেষ করে, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও পঙ্গু হাসপাতালের চিকিৎসায় অপ্রতুলতা এবং দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসার পরিপূর্ণতা না পাওয়ার কারণে তাঁদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
মিরপুরের কবির হোসেনসহ আন্দোলনকারীরা জানান, চোখের গুরুতর আঘাতের পরও সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় তারা হতাশ। বিশেষত, গত তিন মাস ধরে সরকারের পক্ষ থেকে সুচিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও বাস্তবে সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হয়নি।
সরকারি সহায়তার অভাব ও ক্ষোভ
বিক্ষোভকারীরা আরও অভিযোগ করেন, সরকার তাদের প্রতি এখন আর আগের মতো মনোযোগ দেয় না। অনেকেই জানাচ্ছেন, জুলাই মাসে যখন গণ-অভ্যুত্থান হয়, তখন তারা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু এখন তাদের সমস্যার সমাধানে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাঁদের ক্ষোভ আরও বাড়ছে, কারণ এই সমস্যাগুলোর সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি এবং ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়া অতিদ্রুত চলার কথা থাকলেও তা দেরি হচ্ছে।
আন্দোলন এবং গণতান্ত্রিক অধিকার
গণ-অভ্যুত্থানে আহতদের আন্দোলন শুধু একটি শারীরিক দুর্ভোগের বিষয় নয়, এটি একটি বড় সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রশ্নের দিকে নজর আকর্ষণ করছে। সমাজে যখন এক শ্রেণির মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয় না, তখন সেই জনগণ তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে, সেটি একটি গুরুতর প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের অবরোধ এবং বিক্ষোভ সে প্রশ্নটির এক প্রতিফলন।
সংকটের সমাধান কী?
অবশ্যই, এই আন্দোলন বা প্রতিবাদ সরকারের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। সরকারকে এখন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্তদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে, এবং যথাযথ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করতে হবে। এই ধরনের আন্দোলন, যখন রাষ্ট্রের তরফ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, তখন আরও চরম হয়ে উঠতে পারে। জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব; এবং যদি সেই দায়িত্ব পালন না করা হয়, তবে এমন আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে।
এই ঘটনাটি দেখিয়ে দেয়, কেবল রাজনৈতিক সমস্যা নয়, সমাজের অবহেলিত অংশের দাবি মেটানোও জরুরি। তাতে সামাজিক শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।