Dhaka ১১:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম :

আমদানি পরিশোধের চাপ বৃদ্ধির ফলে অস্থির হয়ে উঠছে ডলারের বাজার

  • Update Time : ১১:১৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 46

ট্রেন্ডবিডিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ডলারের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর, সম্প্রতি ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় দরও বাড়ছে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ

অন্তত আটটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে রেমিট্যান্স ডলারের ক্রয়মূল্য বেড়ে ১২২.৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গতকালই (২৮ জানুয়ারি) ২০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। তবে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে এখনো ১২২ টাকা দর দেখাচ্ছে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে রেমিট্যান্স ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এছাড়াও, ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ পার্থক্য ১ টাকার বেশি না রাখার নির্দেশনা দেয়। এই নিয়ম ভাঙলে জরিমানা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতা ও বাজার পরিস্থিতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের দর ১২১.৫০ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে রেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলার বেশি দামে কিনতে আগ্রাসী প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে।

গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অথরাইজড ডিলারস ফোরামের সভায় নতুন নির্দেশনার ফলে এই চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। সভায় জানানো হয়, সাধারণ আমদানি ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সব ওভারডিউ পেমেন্ট দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত

একটি বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রিহেড জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার আগ্রহ অনেক বেড়েছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার কিনতে আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, “ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দর দেওয়া চুক্তিটাই গ্রহণ করব।”

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থান

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার সহায়তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক বাজারেও পর্যাপ্ত ডলার নেই। অন্যদিকে, প্রতিদিন সরকারি এলসি পরিশোধ করতে হচ্ছে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েই কিছুটা বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার কিনছে।

পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তবে ডলার সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

ডলারের বাজারে সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

আমদানি পরিশোধের চাপ বৃদ্ধির ফলে অস্থির হয়ে উঠছে ডলারের বাজার

Update Time : ১১:১৪:৪৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫

ট্রেন্ডবিডিনিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ডলারের বাজার আবারও অস্থির হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কড়াকড়ির ফলে প্রায় তিন সপ্তাহ স্থিতিশীল থাকার পর, সম্প্রতি ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বেড়ে যাওয়ায় রেমিট্যান্স ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা তীব্র হওয়ায় দরও বাড়ছে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ

অন্তত আটটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, বর্তমানে রেমিট্যান্স ডলারের ক্রয়মূল্য বেড়ে ১২২.৫০ টাকায় পৌঁছেছে, যা গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু গতকালই (২৮ জানুয়ারি) ২০ বেসিস পয়েন্ট বেড়েছে। তবে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করে এখনো ১২২ টাকা দর দেখাচ্ছে।

গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে রেমিট্যান্স ডলার কেনাবেচার সর্বোচ্চ দর ১২২ টাকা নির্ধারণ করেছিল। এছাড়াও, ডলার কেনাবেচার মধ্যে সর্বোচ্চ পার্থক্য ১ টাকার বেশি না রাখার নির্দেশনা দেয়। এই নিয়ম ভাঙলে জরিমানা এবং শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

ব্যাংকগুলোর প্রতিযোগিতা ও বাজার পরিস্থিতি

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলারের দর ১২১.৫০ থেকে ১২২ টাকার মধ্যে রেখেছিল। তবে সাম্প্রতিক ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়ায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সংগ্রহের প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স ডলার বেশি দামে কিনতে আগ্রাসী প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে।

গত ২৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের অথরাইজড ডিলারস ফোরামের সভায় নতুন নির্দেশনার ফলে এই চাহিদা আরও বেড়ে গেছে। সভায় জানানো হয়, সাধারণ আমদানি ও ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির সব ওভারডিউ পেমেন্ট দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নির্দেশনা না মানলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানগুলোর মতামত

একটি বিদেশি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রিহেড জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার ফলে বাজার কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও গত কয়েক সপ্তাহে আবার অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার আগ্রহ অনেক বেড়েছে, বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার কিনতে আগ্রাসী নীতি অনুসরণ করছে। তিনি বলেন, “ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে, আমি স্বাভাবিকভাবেই বেশি দর দেওয়া চুক্তিটাই গ্রহণ করব।”

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের অবস্থান

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের এক ট্রেজারি কর্মকর্তা জানান, তারা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত ডলার সহায়তা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি আন্তঃব্যাংক বাজারেও পর্যাপ্ত ডলার নেই। অন্যদিকে, প্রতিদিন সরকারি এলসি পরিশোধ করতে হচ্ছে, এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ওভারডিউ পেমেন্টের চাপ বাড়িয়েছে। ফলে ব্যাংকগুলো বাধ্য হয়েই কিছুটা বেশি দামে রেমিট্যান্স ডলার কিনছে।

পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ডলারের দাম বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় আরও বেড়ে যেতে পারে, যা মুদ্রাস্ফীতি ও সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তবে ডলার সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

ডলারের বাজারে সাম্প্রতিক এই অস্থিরতা অর্থনীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।