কাগজ সংকটে পাঠ্যবই সরবরাহ: শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে!

- Update Time : ০৮:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫
- / 40
দেশের কাগজের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ৩৪৫ কোটি টাকা! আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের মূল্য স্থিতিশীল থাকলেও, দেশের কাগজ মিল মালিকরা চলতি বছর একাধিকবার কাগজের দাম বাড়িয়েছেন। পাঠ্যবই ছাপানোর মৌসুমে মাত্র এক মাসের ব্যবধানে প্রতি টন কাগজের দাম বেড়েছে কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ৪০ কোটির বেশি পাঠ্যবই ছাপাতে প্রয়োজন ১ লাখ ১৫ হাজার টন কাগজ। এর ফলে, অতিরিক্ত মূল্য বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট।
ছাপাখানাগুলোর দুর্দশা
দেশের ১১৬টি ছাপাখানা এই কৃত্রিম সংকটের কারণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বেশি দাম দিয়েও কাগজের অভাব মেটানো যাচ্ছে না। অধিকাংশ ছাপাখানা গত এক মাস ধরে দিনে ১২ ঘণ্টা করে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এই সংকটের পেছনে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।
১০টি ছাপাখানার মালিকের অভিযোগ, যদি দ্রুত বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তবে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ আরও বিলম্বিত হবে। এ অবস্থায়, কাগজ সংকটের কারণে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হবে।
অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রতি টন কাগজের মূল্য ছিল ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ক্ষেত্র বিশেষে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। কাগজ সংকটের সমাধানে সরকারকে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এনসিটিবি ও পাঠ্যবই সংকট
২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৪ কোটি ৩৪ লাখ। তাদের জন্য ছাপাতে হবে ৪০ কোটি ১৫ লাখ বই। তবে, কাগজের অভাবে ছাপার কাজ যথাযথভাবে এগোচ্ছে না। এনসিটিবি জানিয়েছে, প্রাথমিক স্তরের ৬৫% বই সরবরাহ করা হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার আরও কম। এনসিটিবি আশা করছে, ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব বই বিতরণ সম্পন্ন হবে। কিন্তু ছাপাখানা মালিকদের মতে, কাগজ সংকট থাকলে এপ্রিলের আগে সব বই ছাপানো সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের দুরবস্থা
নতুন বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। অনেক শিক্ষার্থী পিডিএফ ডাউনলোড করে পড়ছে। তবে যেসব শিক্ষার্থীর ইন্টারনেট সুবিধা নেই, তারা পড়ছে চরম সমস্যায়। অনেক শিক্ষার্থী কোচিং সেন্টারে ভিড় করছে, যা বাড়তি আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে অভিভাবকদের ওপর।
কাগজ আমদানির দাবি
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের কাগজ মিলগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। মিল মালিকদের এই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হলে সরকারকে শুল্কমুক্ত কাগজ আমদানির উদ্যোগ নিতে হবে। ছাপাখানাগুলো দিনে ৪০ লাখ কপি বই ছাপানোর সক্ষমতা রাখে। কিন্তু কাগজের সংকট থাকায় এই ক্ষমতার যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না।
সমাধানের পথে
এনসিটিবি বলছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব বই ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরবরাহ করার চেষ্টা চলছে। তবে, সংশ্লিষ্টদের মতে, কাগজ আমদানির প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করা প্রয়োজন। কাগজের সংকট নিরসনে সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি।
এ সংকট সমাধানে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তা না হলে, দেশের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।