কেএনএফ ইউনিফর্ম কেলেঙ্কারি: আওয়ামী লীগ নেতার ভাইসহ চারজন আটক

- Update Time : ১১:১০:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / 14
চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হয়ে উঠেছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) জন্য বিপুল পরিমাণ পোশাক তৈরির বিষয়টি। গোয়েন্দা পুলিশ ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) একাধিক অভিযানে গত দুই সপ্তাহে প্রায় ৪৭ হাজার ইউনিফর্ম জব্দ করা হয়েছে বিভিন্ন পোশাক কারখানা থেকে। এসব ইউনিফর্ম কেএনএফ নামের পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যদের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।
এই ঘটনায় সোমবার (২ জুন) রাতে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে ‘ওয়েল ফেব্রিক্স’ নামের একটি কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তরিকুল ইসলামসহ চারজনকে। তরিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের ভাই।
বিপুল ইউনিফর্ম জব্দ:
১৭ মে, ২৬ মে এবং ২৭ মে তারিখে চট্টগ্রামের বায়েজিদ, অক্সিজেন নয়াহাট এবং ডিটি রোড এলাকায় তিনটি পৃথক কারখানায় অভিযান চালিয়ে মোট ৪৭,০০০টির বেশি পোশাক জব্দ করেছে পুলিশ।
- ১৭ মে: বায়েজিদ বোস্তামী থানার নয়ারহাট এলাকার রিংভো অ্যাপারেলস থেকে ২০,৩০০টি পোশাক
- ২৬ মে: অক্সিজেন নয়াহাট এলাকার একটি কারখানা থেকে ১১,৭৮৫টি ইউনিফর্ম
- ২৭ মে: পাহাড়তলী থানার ডিটি রোড এলাকার কারখানা থেকে ১৫,০০০টি পোশাক
তরিকুলসহ চারজন আটক:
পুলিশের অভিযানে সোমবার রাত ৯টার দিকে চান্দগাঁও থেকে আটক করা হয় ইউনিফর্মের কাপড় বহনকারী গাড়িসহ চারজনকে। এদের মধ্যে রয়েছেন ওয়েল ফেব্রিক্সের এমডি তরিকুল ইসলাম। চান্দগাঁও থানার ওসি মো. আফতাব উদ্দিন নিশ্চিত করেছেন, কেএনএফের জন্য পোশাক তৈরির সন্দেহে এই অভিযান চালানো হয়। আটককৃতদের ব্যাপারে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা:
২৭ মে ডিটি রোডের কারখানায় জব্দ হওয়া ১৫,০০০ ইউনিফর্ম সংক্রান্ত ঘটনায় পাহাড়তলী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী বায়েজিদ থানার এসআই আরিফুল ইসলাম। অভিযোগে বলা হয়, ৫০ লাখ টাকার চুক্তিতে পোশাকগুলো তৈরি করছিলেন ‘মহালাসিন মারমা’ নামে এক কেএনএফ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। একইভাবে ১৭ মে’র ঘটনায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২ কোটি টাকার চুক্তিতে পোশাক তৈরির আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
আগে আটক হওয়া ব্যক্তিরা:
এই ঘটনায় রিংভো অ্যাপারেলসের মালিক সাহেদুল ইসলাম, এবং ফরমাশ আনা গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশের দাবি, পোশাক তৈরির কাজ পুরোপুরি সচেতনভাবেই পরিচালিত হচ্ছিল।
কেএনএফ সম্পর্কে কিছু তথ্য:
ফেসবুকে পেজ খুলে কেএনএফ আত্মপ্রকাশ করে ২–৩ বছর আগে। সংগঠনটি পার্বত্য চট্টগ্রামের দুই জেলার ৯টি উপজেলা নিয়ে ‘আলাদা রাজ্য’ গঠনের ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি, হত্যাকাণ্ড ও ইসলামী জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ উঠতে থাকে।
সম্প্রতি বান্দরবানের দুই উপজেলায় ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে তিনটি ব্যাংকে ডাকাতি করে কেএনএফ। এই ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি:
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কোনো সশস্ত্র সংগঠনের জন্য এই পরিমাণ ইউনিফর্ম তৈরি হওয়ার পেছনে আরও গভীর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। আর এ ধরনের ঘটনায় পোশাক খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য উদ্বেগজনক।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি:
কেএনএফের মতো গোষ্ঠী যাতে ভবিষ্যতে এভাবে কার্যক্রম চালাতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রাম, বান্দরবান, ও খাগড়াছড়ি এলাকায় যৌথ অভিযানও বাড়ানো হয়েছে।