Dhaka ০৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শিরোনাম :

কুয়েট সংঘর্ষ: একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত, তদন্ত কমিটি গঠন

  • Update Time : ০৬:০২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 102

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে, সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধান করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিন্ডিকেটের জরুরি সিদ্ধান্ত

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে অনুষ্ঠিত কুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. এস কে শরিফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম এ হাসেম। এছাড়া, সদস্য সচিব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহকে। অন্য দুই সদস্য হলেন শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাকির মোর্শেদ।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল

সিন্ডিকেট সভায় ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট গৃহীত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনরায় বহাল রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর রাজনৈতিক সংযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার এবং তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।

আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংঘর্ষে আহত সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া, প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাছুদ।

ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ

সংঘর্ষের পর থেকেই কুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছে এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের বাইরের ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গ্রেফতার

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. নাজমুল হাসান রাজীব জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে, তবে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের মূল গেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দলীয় বহিষ্কার ও রাজনৈতিক উত্তাপ

সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়, তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের উদ্যোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে কুয়েট ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিন আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

কুয়েট সংঘর্ষ: একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত, তদন্ত কমিটি গঠন

Update Time : ০৬:০২:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে, সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধান করতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সিন্ডিকেটের জরুরি সিদ্ধান্ত

বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) অনলাইনে অনুষ্ঠিত কুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক ড. এস কে শরিফুল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তদন্ত কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এম এ হাসেম। এছাড়া, সদস্য সচিব করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ছাত্র কল্যাণ) শাহ মুহাম্মদ আজমত উল্লাহকে। অন্য দুই সদস্য হলেন শহীদ স্মৃতি হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ আবু ইউসুফ এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাকির মোর্শেদ।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত বহাল

সিন্ডিকেট সভায় ২০২৩ সালের ১১ আগস্ট গৃহীত ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত পুনরায় বহাল রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, সকল শিক্ষক ও কর্মচারীর রাজনৈতিক সংযোগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কার এবং তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তও গৃহীত হয়েছে।

আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সংঘর্ষে আহত সকল শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যয়ভার বহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া, প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগানোর ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। সিন্ডিকেট সভায় সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. মাছুদ।

ক্যাম্পাসে উত্তেজনা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ

সংঘর্ষের পর থেকেই কুয়েট ক্যাম্পাসে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছে এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কায় অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। ক্যাম্পাসের বাইরের ভাড়া বাসায় থাকা শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও গ্রেফতার

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মো. নাজমুল হাসান রাজীব জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে, তবে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। বর্তমানে ক্যাম্পাসের মূল গেটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

দলীয় বহিষ্কার ও রাজনৈতিক উত্তাপ

সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দৌলতপুর থানা যুবদলের সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এদিকে, মঙ্গলবার রাতে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়, তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের উদ্যোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা আসেনি। ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রশাসন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে, শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে কুয়েট ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি আগামী কয়েকদিন আরও উত্তপ্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।