নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ঋতুপর্ণার প্রশ্ন: বাংলাদেশে নারীরা কতটা নিরাপদ?

- Update Time : ০২:১৭:৩২ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
- / 88
বাংলাদেশে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। প্রায় প্রতিদিনই সংবাদমাধ্যমে নারীদের ওপর হওয়া সহিংসতার খবর প্রকাশিত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আজ (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত হচ্ছে। এই বিশেষ দিনে বাংলাদেশের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাফজয়ী নারী ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা।
শনিবার সকালে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ঋতুপর্ণা একটি পোস্ট শেয়ার করেন। তিনি লিখেছেন, “আজকে নারী দিবসে দেশের মানুষের কাছে আমার একটা প্রশ্ন, বাংলাদেশে আজ নারীরা কতোটুকু নিরাপদ?”
তিনি আরও লিখেন, “আজকে দেশে আমাদের কোন প্রকার নিরাপত্তা নাই। ঘর থেকে বের হলেই নিজের ভেতরে ভয় কাজ করে, চারদিকে শুধু ধর্ষণ, খুন, অপহরণ। এই দেশ কবে ঠিক হবে?”
ঋতুপর্ণার এই প্রশ্ন বাংলাদেশের নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে চলমান সংকটকে আরও একবার সামনে নিয়ে এসেছে। দেশজুড়ে নারীদের ওপর সহিংসতা, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি, অপহরণ এবং অন্যান্য অপরাধের ঘটনা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নারীরা আজ ঘর থেকে বাইরে বের হওয়ার সময় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
নারী নির্যাতনের বর্তমান পরিস্থিতি
বাংলাদেশে নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলো দিন দিন আরও জটিল ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি কয়েকটি বর্বর ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সমাজকে স্তম্ভিত করেছে। নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা শুধু শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও অপরাধীরা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে সমাজের ভূমিকা
ঋতুপর্ণার প্রশ্ন শুধু সরকার বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দিকেই নয়, এটি সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছেও একটি বার্তা বহন করে। নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুধু আইনই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন। পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের শিক্ষা প্রদান করতে হবে।
নারী দিবসের প্রত্যাশা
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। এই দিনটি শুধু উদযাপনের নয়, নারীদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের পথ খুঁজে বের করারও। ঋতুপর্ণার মতো নারীদের কণ্ঠস্বর শোনা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
সমাধানের পথ
১. আইনের কঠোর প্রয়োগ: নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করতে হবে। অপরাধীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. সামাজিক সচেতনতা: নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানের শিক্ষা সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।
৩. নারীদের ক্ষমতায়ন: নারীদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। নারীরা যাতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন হতে পারে, সে জন্য প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করতে হবে।
৪. নিরাপদ পরিবেশ তৈরি: নারীদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। গণপরিবহন, কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
ঋতুপর্ণার প্রশ্ন আমাদের সকলকে ভাবতে বাধ্য করেছে। নারী দিবসে শুধু আলোচনা নয়, নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশের নারীদের জন্য একটি নিরাপদ ও সম্মানজনক পরিবেশ তৈরি করতে আমাদের সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে।