বাংলাদেশের নতুন মুদ্রানীতি: সুদহার না বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোর কৌশল

- Update Time : ১০:৪৮:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 38
আগামীকাল বাংলাদেশের নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হতে যাচ্ছে, যা চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের জন্য কার্যকর হবে। এবারের নীতিতে প্রধান ফোকাস থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ ধরে রাখা, এবং বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা। তবে, মুদ্রানীতি সংকোচনমুখী হতে হলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক সুদহার বাড়ানোর পরিবর্তে একটি বৈচিত্র্যময় নীতি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ব্যবসায়ীদের মতে, বাংলাদেশে সুদহার বৃদ্ধি করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বাস্তবসম্মত নয়। শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি, এবং সুদহার বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। ফলে, ব্যবসায়ীরা মনে করেন, একটি ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতিই বর্তমানে সবচেয়ে উপযুক্ত উপায়।
গত কয়েক মাসে, বাংলাদেশ সরকার সুদহার বাড়ানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কিন্তু এর তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। খাদ্য মূল্যস্ফীতি দীর্ঘদিন ধরে ১০ শতাংশের উপরে রয়েছে এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে এটি কিছুটা কমে ১০.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে, দেশের গরিব ও সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘ সময় ধরে চাপের মধ্যে রয়েছেন।
এবছরের প্রথম মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর, ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, মুদ্রানীতির মূল উদ্দেশ্য হবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা, পাশাপাশি বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ও রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। তবে, সুদহার বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর বদলে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ সম্প্রতি জানিয়েছেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতির উচ্চ হার জনগণের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে, তবে মূল্যস্ফীতি কমাতে ইতিমধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি আশা করেন, পরবর্তী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতির হার কমবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, ড. মইনুল ইসলাম মনে করেন, মুদ্রানীতিতে সুদহার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। তাঁর মতে, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য বাজারের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে এবং মুদ্রানীতি ছাড়া অন্যান্য পদক্ষেপও জরুরি। তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির বিকল্প নেই, তবে সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকটের সমাধান সম্ভব হবে।
নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব গ্রহণের পর, ৫ মাসে তিন দফা নীতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, যা বর্তমানে ১০ শতাংশে রয়েছে। তবে, সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব এখনো তেমন ফলপ্রসূ হয়নি। বেসরকারি খাতে ঋণের চাহিদাও কমে গেছে।
এতদূর থেকে পরিস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংক এই সময়ে সুদের হার বাড়ানোর পরিবর্তে সমন্বিত কৌশলের দিকে এগোচ্ছে। সুদহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ঋণের সুদও বেড়ে যাওয়ায়, ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, সুদহার বাড়ানোর বদলে বিকল্প সমাধান খোঁজার মধ্যেই রয়েছে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ।