সান্তোসে নেইমারের রাজকীয় প্রত্যাবর্তন: নতুন অধ্যায়ের সূচনা

- Update Time : ১২:৩২:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 37
অবশেষে নিজ শৈশবের ক্লাব সান্তোসেই ফিরলেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার। শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) রাতে এক রাজকীয় আয়োজনে নেইমারকে বরণ করে নেয় ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটি। তার প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সান্তোসের স্লোগান ছিল— ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক’।
সান্তোসে ফিরে স্বপ্নের শুরু
বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে প্রায় তিন ঘণ্টার এ অনুষ্ঠানে পা রাখার আগে ব্রাজিলের স্থানীয় সময় সকালে সাও পাওলোয় অবতরণ করেন নেইমার। ব্যক্তিগত বিমানে পৌঁছানোর পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হেলিকপ্টারে করে সান্তোসে ফিরে আসেন ৩২ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড। মাঠের মাঝে প্রস্তুত করা বিশেষ মঞ্চে উঠে তিনি দর্শকদের প্রতি হাত নেড়ে ভালোবাসার প্রতিদান দেন।
সান্তোসের দর্শকরাও ছিলেন উদ্দীপ্ত। নয় বছরের মাথায় ঘরের ছেলেকে ফিরে পেয়ে তারা আবেগে আপ্লুত। বৃষ্টির মাঝেও মাঠে প্রবেশ করে নেইমার তার বিখ্যাত গোল উদ্যাপন ভঙ্গিমায় শুয়ে পড়েন এবং সান্তোসের মাটিতে চুমু খান। এভাবেই তিনি জানান দেন, এখানে ফিরতে পেরে তিনি কতটা আনন্দিত।
আনুষ্ঠানিক চুক্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
সম্প্রতি সৌদি আরবের ক্লাব আল-হিলালের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেন নেইমার। সেখানে ইনজুরির কারণে মাত্র ৭ ম্যাচ খেলতে পেরেছিলেন তিনি। সান্তোসের সহ-সভাপতি ফার্নান্দো বোনাভিদেস ক্যানাল জানিয়েছেন, নেইমারের সঙ্গে আপাতত ছয় মাসের চুক্তি হয়েছে, তবে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাবেন যাতে নেইমার ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত ক্লাবেই থাকেন।
কালো ক্যাপ, কালো গেঞ্জি পরে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে সান্তোসের ‘রাজা’ হয়ে যান নেইমার। ক্লাবটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ‘দ্য প্রিন্স ইজ ব্যাক’ নামে একটি ভিডিও পোস্ট করে। এর আগে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে কিংবদন্তি পেলের কণ্ঠস্বরে নেইমারকে ফেরার আহ্বান জানিয়ে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। সেই ভিডিওর দ্বিতীয় সংস্করণে নেইমার বলেন, ‘কিং পেলে, আপনার ইচ্ছাই আমার নির্দেশ। সিংহাসন ও মুকুট আপনার, কিন্তু ১০ নম্বর জার্সি গায়ে পরাটা সম্মানের বিষয়। আমি আপনার রেখে যাওয়া লিগ্যাসিকে সম্মান দিতে সবকিছু করবো।’
বিশ্বকাপের স্বপ্ন ও মাঠে ফেরার অপেক্ষা
২০২৬ বিশ্বকাপ হতে পারে নেইমারের শেষ বিশ্বকাপ। তাই ব্রাজিলের জাতীয় দলে ফিরতে হলে নিয়মিত ম্যাচ খেলার প্রয়োজন। আল-হিলালে সেই সুযোগ পাচ্ছিলেন না, কিন্তু সান্তোসে নিয়মিত মাঠে নামার সম্ভাবনা প্রবল। তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে ফিরতে চাই, কারণ এখনো আমার একটি বিশ্বকাপ জেতার মিশন বাকি। আমি শেষ পর্যন্ত এটার পেছনে ছুটবো।’
সান্তোসে ফেরার কারণ ব্যাখ্যা করে নেইমার বলেন, ‘কিছু সিদ্ধান্ত থাকে, যেগুলো শুধুই ফুটবল সংক্রান্ত নয়। আল-হিলালে ভালোই ছিলাম, পরিবারও ভালো ছিল, কিন্তু কিছু কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে হলো। অনুশীলনে নিজেকে ভালো লাগছিল না, তাই ফিরে আসার সুযোগ পেয়েই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
ফেরার পর অনুভূতি কেমন? এ প্রশ্নের উত্তরে নেইমার জানান, ‘এখানে পা রাখার পর থেকেই মনে হচ্ছে, আমি আবার ১৭ বছর বয়সে ফিরে গেছি। খুব ভালো লাগছে এবং খেলতে মুখিয়ে আছি।’
নতুন যাত্রার শুরু কবে?
নেইমারের ফুটবল ক্যারিয়ারের চক্র যেন পূর্ণতা পেল। সান্তোসের যুবদল থেকে উঠে আসা নেইমার ২০০৯-২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্লাবটির মূল দলে খেলেন। এরপর ইউরোপ যাত্রা, বার্সেলোনা থেকে পিএসজি এবং সবশেষে আল-হিলাল। দীর্ঘ ১১ বছর পর আবারও সেই সান্তোসে ফিরে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেন তিনি।
নেইমারের দ্বিতীয় দফায় সান্তোস অভিষেক নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের উত্তেজনা তুঙ্গে। আগামী বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ক্যাম্পেওনাতো পলিস্তায় বোটাফোগোর বিপক্ষে ম্যাচেই মাঠে নামতে পারেন তিনি। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম ‘গ্লোবো’ জানিয়েছে, ওই ম্যাচেই সান্তোসের হয়ে তার প্রত্যাবর্তন হতে পারে।
সমর্থকরা এখন অধীর অপেক্ষায় রয়েছেন, কবে মাঠে ফিরবেন নেইমার? তবে ইনজুরি থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে কিছুটা সময় নিতে হতে পারে এই তারকাকে। সংবাদ সম্মেলনে নেইমার জানান, শারীরিকভাবে আগের চেয়ে ভালো বোধ করলেও এখনো ১০০ শতাংশ ফিট নন। তবে, ফুটবলবিশ্ব তাকিয়ে আছে তার পরবর্তী ধাপের দিকে। সান্তোসের মাঠে ফিরে তিনি কি পারবেন তার পুরনো জাদু ফিরিয়ে আনতে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে আগামী কয়েক মাস।