চট্টগ্রামে প্লাস্টিক দূষণ রোধে ‘প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার’ প্রকল্প: সিটি মেয়রের উদ্যোগে নতুন দিগন্ত

- Update Time : ০৯:১০:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
- / 41
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, চট্টগ্রামকে পলিথিন-প্লাস্টিক মুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তোলাই তার প্রধান লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। এক বছর মেয়াদী একটি অভিনব প্রকল্প চালু করেছে উভয় সংস্থা, যা চট্টগ্রামে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
দুটি সংস্থার সম্মিলিত উদ্যোগে শুরু হয়েছে “প্লাস্টিকের বিনিময়ে বাজার” প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায়, যারা পরিত্যক্ত প্লাস্টিক জমা দেবেন, তারা বাজারে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারবেন। ২৩ ডিসেম্বর, সোমবার চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর বাকলিয়া স্টেডিয়ামে প্রকল্পটির উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পটি প্লাস্টিক দূষণ কমাতে একটি নতুন উপায় হিসেবে প্রবর্তিত হয়েছে। পতেঙ্গা ও হালিশহরে স্থায়ী স্টোর চালু করা হবে, যেখানে জনগণ প্লাস্টিক জমা দিয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে বাজার করার সুযোগ পাবেন। ৫০টি ভ্রাম্যমাণ ক্যাম্পও আয়োজন করা হবে, যেখানে ৫০০ পরিবারের বেশি সদস্য প্লাস্টিক জমা দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। প্রকল্পটির মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিক রিসাইকেল করার। বর্তমানে, বাজারে যেখানে প্রতি কেজি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের দাম ২০-২৫ টাকা, সেখানে এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত দাম দেয়া হবে।
এ প্রকল্পের সুবিধা সম্পর্কে জানিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, “প্লাস্টিক দূষণ রোধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ, যা চট্টগ্রামকে পরিবেশবান্ধব এবং বাসযোগ্য করে তুলতে সহায়তা করবে। প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।”
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বোর্ড সদস্য মো. জামাল উদ্দিন জানান, প্লাস্টিক দূষণ এতটাই ব্যাপক যে, এককভাবে সরকার এর প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। এ জন্য জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে এ ধরনের উদ্যোগকে সফল করতে হবে। তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদিত হয়, যা খাল ও নর্দমায় গিয়ে পড়ে। বিশেষ করে কর্ণফুলী নদীতে সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও জানান, এই প্রকল্পটি একটি টেকসই অলাভজনক ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে কাজ করবে। প্রথম বছরেই প্লাস্টিকের প্রতি কেজিতে ৩০-৪০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে এই ভর্তুকি কমিয়ে প্রকল্পটি লাভজনকভাবে পরিচালনা করা হবে।
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ২০২২ সালে প্রথম সেন্টমার্টিনে প্লাস্টিক এক্সচেঞ্জ স্টোর চালু করেছিল, যেখানে দ্বীপবাসী প্লাস্টিক জমা দিয়ে পণ্য ক্রয় করতে পারতেন। সেন্টমার্টিনের সাফল্যের পর, এই উদ্যোগ এখন চট্টগ্রামের অন্যান্য অঞ্চলে চালু করা হয়েছে এবং এটি দেশব্যাপী প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্লাস্টিক দূষণ কমিয়ে, পরিবেশের সুরক্ষা ও স্থানীয়দের জীবনমান উন্নত করতে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে, যা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।