পাঠ্যবই সংকট: শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ ও গাইড বইয়ের দাপট

- Update Time : ১০:৫২:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 95
শিক্ষাবর্ষ শুরু হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও শিক্ষার্থীদের হাতে এখনও সব পাঠ্যবই পৌঁছেনি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় ৪০ কোটি ১৫ লাখ বইয়ের মধ্যে মাত্র ২২ কোটি বই ছাপানো হয়েছে। অর্থাৎ, এখনও ১৮ কোটি বই ছাপার অপেক্ষায় রয়েছে। কাগজ সংকট ও ছাপাখানার ব্যস্ততার কারণে এই দেরি হচ্ছে।
গাইড বইয়ের রমরমা বাজার
পাঠ্যবই না থাকায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে গাইড বইয়ের দিকে ঝুঁকছেন। রাজধানীর নীলক্ষেত, বাংলাবাজার ও মিরপুর-১০ নম্বর বই বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গাইড বই সহজলভ্য হলেও পাঠ্যবইয়ের সংকট প্রকট। গাইড বইয়ের দামও আকাশচুম্বী—পঞ্চম শ্রেণির এক সেট গাইড বই বিক্রি হচ্ছে ৭৩০ থেকে ৮০০ টাকায়, যা আলাদা আলাদা কিনলে ১,০০০ থেকে ১,৪০০ টাকা পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
গত ১৫ বছর ধরে লেকচার, পাঞ্জেরী, এডভান্সড, পপি, অনুপম, জননী, জুপিটারসহ ৫০টির বেশি পাবলিকেশন্স অবৈধ গাইড বই বিক্রি করছে। এবারের পরিস্থিতিতে তারা পাঠ্যবই ছাপানোর দায়িত্ব পেয়েও গাইড বইকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজারে সরবরাহ করেছে।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গাইড বইয়ের প্রসার
২০০৮ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী গাইড বই নিষিদ্ধ। আইন অনুযায়ী, নিষিদ্ধ গাইড বই ছাপানোর দায়ে সর্বোচ্চ সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে গাইড বই প্রকাশকদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবার গাইড বই নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছাপাখানাগুলোতে পাঠ্যবই ছাপার সময় যেন গাইড বই প্রকাশ না হয় তা নিশ্চিত করতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। তবুও, প্রকাশকরা বিভিন্ন নামে গাইড বই বাজারজাত করছে—যেমন ‘সহায়ক বই’ ও ‘অনুশীলনমূলক বই’।
শিক্ষার মানের ওপর প্রভাব
শিক্ষাবিদরা মনে করেন, গাইড বই মুখস্থবিদ্যার ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা নষ্ট করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক অধ্যাপক জানান, পাঠ্যবই থেকে উত্তর খুঁজে বের করার বদলে শিক্ষার্থীরা গাইড বইয়ের নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা তাদের চিন্তাশক্তির বিকাশ রুদ্ধ করছে।
এনসিটিবি বলছে, তারা সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে বই ছাপাচ্ছে। ‘ব্যুরো ভেরিটাস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান মাধ্যমিকের বইয়ের মান তদারকি করছে, এবং তারা দাবি করছে, এবারের বইগুলো গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মানের।
উপসংহার
সরকারের কঠোর অবস্থানের পরও গাইড বই বন্ধ করা যায়নি। অপরদিকে, পাঠ্যবই পেতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষা করতে হচ্ছে। সঠিক পদক্ষেপের অভাবে শিক্ষাব্যবস্থা ভোগান্তিতে পড়েছে, এবং অভিভাবকরা উচ্চমূল্যে গাইড বই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। পাঠ্যবই সরবরাহের গতি বাড়ানো এবং গাইড বই নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।