Dhaka ০৫:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম :

প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার গল্প: অধ্যাপক ইউনূসের না থেকে হ্যাঁ বলার যাত্রা

  • Update Time : ০৬:১৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 34

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হাসপাতালে থাকার সময় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ এবং সেই সময়ে তাঁর চিন্তাভাবনা নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক পডকাস্টে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরের সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় ‘রাখমান রিভিউ’ নামের পডকাস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন অধ্যাপক ইউনূস। এই কথোপকথন গত বৃহস্পতিবার লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়।

প্রস্তাব পাওয়ার মুহূর্ত

অধ্যাপক ইউনূস জানান, প্রথম যখন তাঁর কাছে ফোনকল আসে, তখন তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ছিলেন। ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচারের পর বিশ্রামে থাকার সময় তিনি ছাত্রনেতাদের ফোন পান। তাঁরা তাঁকে জানান, শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এখন একটি নতুন সরকার গঠন করা জরুরি।

‘‘তারা বলল, ‘আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি তখন বললাম, না, আমি এ দায়িত্ব নিতে পারব না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং জড়িতও হতে চাই না,’’ বলেন ইউনূস।

তাঁর কাছে ফোন করা ছাত্রনেতাদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। তবে তাঁদের আকুল অনুরোধে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোমরা ভালো কোনো নেতা খুঁজে নাও, বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন।’’ কিন্তু ছাত্রনেতারা বলেছিলেন, তাঁরা কাউকে পাননি এবং তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছেন।

ফিরতে রাজি হওয়া

একদিন সময় নিতে বললেও ছাত্রনেতারা আবারও ফোন করে জানান, তাঁরা অন্য কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে পাননি। তখন অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘তোমরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছ, রক্ত দিয়েছ, আন্দোলনে সামনে থেকেছ। আমি চাইনি, কিন্তু তোমাদের জন্য কিছু করা উচিত।’’ তখনই তিনি রাজি হন।

‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার গুঞ্জন

এরপর হাসপাতালের একজন নার্স তাঁকে ফুলের তোড়া উপহার দেন এবং বলেন, ‘‘আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’’ ইউনূস বিস্মিত হয়ে জানতে চান, এটি কোথা থেকে জানলেন? নার্স বলেন, ‘‘সব গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।’’

এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের প্রধান ও বোর্ড সদস্যরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, বিকেলের আগে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দেবেন না। ইউনূস তাঁদের বলেন, ‘‘আমাকে যেতে হবে। দেশে সবাই অপেক্ষা করছে।’’ হাসপাতালের পরিচালক তাঁকে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করতে সম্মত হন এবং বলেন, ‘‘আপনি প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করব।’’

দেশে ফেরার প্রস্তুতি

এরপর ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল তাঁকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। পুরো জাতি তখন তাঁর ফেরার অপেক্ষায় ছিল। তিনি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে দেশে ফেরেন।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ছাত্রনেতারা নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছিলেন। ইউনূস বিমানবন্দর থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সবাইকে ধৈর্য, শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।

এভাবেই তাঁর প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার গল্পের সূচনা হয়, যা দেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার গল্প: অধ্যাপক ইউনূসের না থেকে হ্যাঁ বলার যাত্রা

Update Time : ০৬:১৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে হাসপাতালে থাকার সময় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ এবং সেই সময়ে তাঁর চিন্তাভাবনা নিয়ে সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক পডকাস্টে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি।

বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরের সময় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এর বৈদেশিকবিষয়ক প্রধান ভাষ্যকার গিডেয়েন রাখমানের উপস্থাপনায় ‘রাখমান রিভিউ’ নামের পডকাস্টে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন অধ্যাপক ইউনূস। এই কথোপকথন গত বৃহস্পতিবার লিখিত আকারে প্রকাশ করা হয়।

প্রস্তাব পাওয়ার মুহূর্ত

অধ্যাপক ইউনূস জানান, প্রথম যখন তাঁর কাছে ফোনকল আসে, তখন তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ছিলেন। ছোট্ট একটি অস্ত্রোপচারের পর বিশ্রামে থাকার সময় তিনি ছাত্রনেতাদের ফোন পান। তাঁরা তাঁকে জানান, শেখ হাসিনা চলে গেছেন এবং এখন একটি নতুন সরকার গঠন করা জরুরি।

‘‘তারা বলল, ‘আমাদের জন্য সরকার গঠন করুন।’ আমি তখন বললাম, না, আমি এ দায়িত্ব নিতে পারব না। আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না এবং জড়িতও হতে চাই না,’’ বলেন ইউনূস।

তাঁর কাছে ফোন করা ছাত্রনেতাদের সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না। তবে তাঁদের আকুল অনুরোধে তিনি বলেছিলেন, ‘‘তোমরা ভালো কোনো নেতা খুঁজে নাও, বাংলাদেশে অনেক যোগ্য ব্যক্তি আছেন।’’ কিন্তু ছাত্রনেতারা বলেছিলেন, তাঁরা কাউকে পাননি এবং তাঁর দিকেই তাকিয়ে আছেন।

ফিরতে রাজি হওয়া

একদিন সময় নিতে বললেও ছাত্রনেতারা আবারও ফোন করে জানান, তাঁরা অন্য কোনো উপযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে পাননি। তখন অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘তোমরা এত ত্যাগ স্বীকার করেছ, রক্ত দিয়েছ, আন্দোলনে সামনে থেকেছ। আমি চাইনি, কিন্তু তোমাদের জন্য কিছু করা উচিত।’’ তখনই তিনি রাজি হন।

‘প্রধানমন্ত্রী’ হওয়ার গুঞ্জন

এরপর হাসপাতালের একজন নার্স তাঁকে ফুলের তোড়া উপহার দেন এবং বলেন, ‘‘আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।’’ ইউনূস বিস্মিত হয়ে জানতে চান, এটি কোথা থেকে জানলেন? নার্স বলেন, ‘‘সব গণমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে।’’

এর কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের প্রধান ও বোর্ড সদস্যরা তাঁকে শুভেচ্ছা জানান এবং বলেন, বিকেলের আগে হাসপাতাল ছাড়ার অনুমতি দেবেন না। ইউনূস তাঁদের বলেন, ‘‘আমাকে যেতে হবে। দেশে সবাই অপেক্ষা করছে।’’ হাসপাতালের পরিচালক তাঁকে ভ্রমণের জন্য প্রস্তুত করতে সম্মত হন এবং বলেন, ‘‘আপনি প্রধানমন্ত্রী। আপনার নিরাপত্তার জন্য আমরা সব ব্যবস্থা করব।’’

দেশে ফেরার প্রস্তুতি

এরপর ফরাসি সেনাবাহিনীর বড় একটি দল তাঁকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়। পুরো জাতি তখন তাঁর ফেরার অপেক্ষায় ছিল। তিনি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজে দেশে ফেরেন।

বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর ছাত্রনেতারা নতুন সরকারের রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছিলেন। ইউনূস বিমানবন্দর থেকেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সবাইকে ধৈর্য, শান্তি ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানান।

এভাবেই তাঁর প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার গল্পের সূচনা হয়, যা দেশের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।