রাজশাহীতে রিকশাচালক হত্যা: আসামিরা প্রকাশ্যে, গ্রেপ্তার নেই!

- Update Time : ১০:১১:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
- / 77
রাজশাহীতে রিকশাচালক হত্যা মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছেন, পুলিশ নির্বিকার?
রাজশাহীতে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত রিকশাচালক গোলাম হোসেন হত্যার আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও, পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না! এমনকি, কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জন্মদিনের কেক কাটার ছবি পোস্ট করছেন, দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন—কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাহলে কি রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণেই আসামিরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে?

হত্যাকাণ্ডের পটভূমি
৬ মার্চ নগরীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতার ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো এবং তাঁর ভাইকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনার পরদিন সন্ধ্যায় বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। চার ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বিনিময় হয়, তিনটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
সেই রাতে রিকশা জমা দিয়ে বাসায় ফেরার পথে সংঘর্ষস্থলে ভুলক্রমে এক পক্ষের কর্মী ভেবে গোলাম হোসেনকে ছুরিকাঘাত করা হয়। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ মার্চ রাতে তিনি মারা যান। ১৩ মার্চ নিহতের স্ত্রী পরিবানু বেগম বোয়ালিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সেই মামলার আসামিরা কি বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত?
রাজনীতির ছায়ায় আসামিদের নিরাপত্তা?
মামলার আসামির তালিকায় নগরের শাহ মখদুম থানা বিএনপির আহ্বায়ক সুমন সরদার, চন্দ্রিমা থানা বিএনপির আহ্বায়ক ফাইজুর হক, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মীর তারেক, মহিলা দলের সহক্রীড়া সম্পাদক লাভলী খাতুনের স্বামী সোহেল রানা, লাভলীর ভাই মো. নাঈম এবং যুবদল কর্মী রনির নাম রয়েছে। কিন্তু মামলার প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
তাদের কেউ কেউ প্রকাশ্যে ফেসবুকে ছবি দিচ্ছেন, দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ, গত সোমবার সুমন সরদার রাজপাড়া থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক হাসান শিশিরের জন্মদিনে কেক কেটে ফেসবুকে ছবি পোস্ট করেছেন। এর আগের দিন তিনি মামলার আরেক আসামি মীর তারেকের সঙ্গে সেলফি তুলে পোস্ট করেছেন। তাহলে পুলিশ কেন তাদের ধরতে পারছে না?
ভুক্তভোগী পরিবারের আশঙ্কা
নিহত গোলাম হোসেনের স্ত্রী পরিবানু বেগম বলেন, ‘আমি মামলা করেছি, কিন্তু এখনো কোনো আসামি ধরা পড়েনি। আমি জানি না আদৌ ধরা পড়বে কি না। এলাকার কিছু নেতা সহযোগিতা করতে চেয়েছেন, এমনকি মামলা না চালানোর জন্য “কিছু একটা” করে দেওয়ার কথাও বলেছেন। আমি কি বিচার পাব?’
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ‘মামলার পর বাদীর কিছু করার নেই। এখন আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশের দায়িত্ব রয়েছে। যদি আসামিরা এলাকাতেই থাকেন এবং গ্রেপ্তার না হন, তাহলে আমি থানাকে তৎপর হওয়ার জন্য বলব।’
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—
- আসামিরা প্রকাশ্যে থাকলেও কেন তারা গ্রেপ্তার হচ্ছে না?
- রাজনৈতিক পরিচয় কি আসামিদের আইনের হাত থেকে বাঁচিয়ে দিচ্ছে?
- একজন সাধারণ নাগরিক হলে কি এতদিনেও গ্রেপ্তার না হয়ে প্রকাশ্যে ঘুরতে পারতেন?
বাংলাদেশে আইন কি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর জন্য? নাকি বিচার পাওয়াও এখন রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে? পুলিশ সত্যিই নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে, নাকি তারা রাজনৈতিক চাপের মুখে নিষ্ক্রিয়? এ প্রশ্নগুলোর উত্তর কি আমরা কখনো পাব? নাকি অন্যায়ের শিকার পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় দিন কাটাবে?
নিউজ সোর্স – See More