Dhaka ০৯:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শিরোনাম :

রোজায় সুস্থ থাকতে চান? ঘরে তৈরি খাবারই আপনার সমাধান

  • Update Time : ১০:১৯:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫
  • / 84

মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও সিয়াম সাধনার মাস। এই পবিত্র মাসে ইফতার ও সেহরির সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে বাজারে বিক্রি হওয়া ইফতারি ও অন্যান্য খাবারে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা তাই রোজায় ঘরে তৈরি তাজা ও ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার

রমজান মাসে ইফতারির চাহিদা বেড়ে যায়। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে নিম্নমানের ও ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার করে খাবার তৈরি করছেন। মুড়িকে সাদা করতে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড ব্যবহার করা হয়। মুড়ির দানা বড় করতে ইউরিয়া সার মেশানো হয়, যা মানবদেহে রক্তের শ্বেতকনিকা ও হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। এছাড়া জিলাপি মচমচে রাখতে তেলে মবিল মেশানো হয়, যা কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর। বেগুনি, পিঁয়াজু ও চপে আকর্ষণীয় করতে টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।

মিষ্টি জাতীয় খাবারে ভেজাল চিনি, স্যাকারিন ও সুকরালেস ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদান পেটের পীড়া, আলসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “ইফতারির খাবার আমাদের ঐতিহ্যবাহী, তবে তা যেন তাজা ও ভেজালমুক্ত হয়। বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। যাদের পেটের সমস্যা বা এসিডিটি আছে, তারা ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খান।”

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর পাকস্থলী সংবেদনশীল থাকে। তাই ইফতারিতে গুরুপাক, তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়ানো উচিত। এ ধরনের খাবার পাকস্থলীর এসিডের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। ইফতারের শুরুতে পানি ও সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন ফল, খেজুর, চিড়া ও স্যুপ খাওয়া ভালো।”

সুস্থ থাকতে করণীয়

১. ঘরে তৈরি খাবার খান: বাইরের খোলা খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি তাজা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।
২. ভাজা-পোড়া কম খান: তৈলাক্ত ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. ফল ও সবজি বেশি খান: ইফতারে তাজা ফল, সবজি ও সালাদ রাখুন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খান।
৫. চিনি ও লবণ কম ব্যবহার করুন: মিষ্টি ও নোনতা খাবারে চিনি ও লবণের পরিমাণ কম রাখুন।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যাদের পেটের সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করুন।

সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি

রমজান মাসে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজাল ও ক্ষতিকর খাবারের ব্যবহার বন্ধ করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে এবং ঘরে তৈরি তাজা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

রোজায় সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে তৈরি তাজা ও ভেজালমুক্ত খাবার খেয়ে এই পবিত্র মাসকে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলুন।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

রোজায় সুস্থ থাকতে চান? ঘরে তৈরি খাবারই আপনার সমাধান

Update Time : ১০:১৯:০৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২ মার্চ ২০২৫

মাহে রমজান মুসলমানদের জন্য আত্মশুদ্ধি ও সিয়াম সাধনার মাস। এই পবিত্র মাসে ইফতার ও সেহরির সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে বাজারে বিক্রি হওয়া ইফতারি ও অন্যান্য খাবারে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশেষজ্ঞরা তাই রোজায় ঘরে তৈরি তাজা ও ভেজালমুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার

রমজান মাসে ইফতারির চাহিদা বেড়ে যায়। এই সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মুনাফার লোভে নিম্নমানের ও ক্ষতিকর উপকরণ ব্যবহার করে খাবার তৈরি করছেন। মুড়িকে সাদা করতে ট্যানারির বিষাক্ত রাসায়নিক সোডিয়াম হাইড্রো সালফাইড ব্যবহার করা হয়। মুড়ির দানা বড় করতে ইউরিয়া সার মেশানো হয়, যা মানবদেহে রক্তের শ্বেতকনিকা ও হিমোগ্লোবিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে। এছাড়া জিলাপি মচমচে রাখতে তেলে মবিল মেশানো হয়, যা কিডনি ও লিভারের জন্য ক্ষতিকর। বেগুনি, পিঁয়াজু ও চপে আকর্ষণীয় করতে টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা হয়, যা ক্যানসারের মতো মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।

মিষ্টি জাতীয় খাবারে ভেজাল চিনি, স্যাকারিন ও সুকরালেস ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এসব ভেজাল ও ক্ষতিকর উপাদান পেটের পীড়া, আলসার, কিডনি ও লিভারের সমস্যা, এমনকি ক্যানসারের মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

চিকিৎসকদের পরামর্শ

ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, “ইফতারির খাবার আমাদের ঐতিহ্যবাহী, তবে তা যেন তাজা ও ভেজালমুক্ত হয়। বাইরের খোলা খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। ঘরে তৈরি খাবারই সবচেয়ে নিরাপদ। যাদের পেটের সমস্যা বা এসিডিটি আছে, তারা ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। তাজা ও সহজে হজম হয় এমন খাবার খান।”

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের কার্যকরী সভাপতি ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, “দীর্ঘ সময় রোজা রাখার পর পাকস্থলী সংবেদনশীল থাকে। তাই ইফতারিতে গুরুপাক, তৈলাক্ত ও অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়ানো উচিত। এ ধরনের খাবার পাকস্থলীর এসিডের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। ইফতারের শুরুতে পানি ও সহজে হজম হয় এমন খাবার যেমন ফল, খেজুর, চিড়া ও স্যুপ খাওয়া ভালো।”

সুস্থ থাকতে করণীয়

১. ঘরে তৈরি খাবার খান: বাইরের খোলা খাবারের পরিবর্তে ঘরে তৈরি তাজা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।
২. ভাজা-পোড়া কম খান: তৈলাক্ত ও গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন।
৩. ফল ও সবজি বেশি খান: ইফতারে তাজা ফল, সবজি ও সালাদ রাখুন।
৪. পর্যাপ্ত পানি পান করুন: ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার খান।
৫. চিনি ও লবণ কম ব্যবহার করুন: মিষ্টি ও নোনতা খাবারে চিনি ও লবণের পরিমাণ কম রাখুন।
৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যাদের পেটের সমস্যা বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা আছে, তারা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার নির্বাচন করুন।

সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি

রমজান মাসে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় ভেজাল ও ক্ষতিকর খাবারের ব্যবহার বন্ধ করতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো এবং ভেজাল বিরোধী অভিযান জোরদার করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে এবং ঘরে তৈরি তাজা ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

রোজায় সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘরে তৈরি তাজা ও ভেজালমুক্ত খাবার খেয়ে এই পবিত্র মাসকে স্বাস্থ্যকর ও আনন্দময় করে তুলুন।