শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৯ ঘণ্টা অনশন: ৩ দিনের সময়সীমা বেঁধে অনশন ভাঙলেন তারা

- Update Time : ১১:৪৯:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫
- / 31
চট্টগ্রাম, ৩০ জানুয়ারি ২০২৫: শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের বিচারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে ৯ ঘণ্টার দীর্ঘ অনশন পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে শুরু হওয়া এই অনশন শেষ হয় রাত ৯টায়। তাদের দাবি ছিল, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিরুদ্ধে গণ-অভ্যুত্থান, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিচার এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান পদক্ষেপ।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী জমায়েত হন এবং পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য রাসেল আহমেদ। তারা শুরু করেন শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের বিচারের দাবিতে স্লোগান এবং বিপ্লবী গান গাওয়া। রাসেল আহমেদ দাবি করেন, “এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। শেখ হাসিনাসহ সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।”
রাসেল আহমেদের নেতৃত্বে প্রায় ২০ শিক্ষার্থী ফুটপাতে বসে অনশনে বসেন, এবং একে একে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তারা চেরাগী পাহাড়-জামালখান সড়কের এক পাশে অবস্থান নেন, সড়কের এক পাশে ১৫০ মিটার এলাকা বন্ধ হয়ে যায়।
অনশনের মধ্যে তারা বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আশরিফা আহমেদ, নীলা আফরোজ এবং জুবাইরুল আলমসহ বিভিন্ন নেতারা। তারা বলেন, “ইউনূস সরকারকে বসানো হয়েছিল বিচার এবং সংস্কারের জন্য, কিন্তু এখনো কোনো সুষ্ঠু পদক্ষেপ দেখা যায়নি। সেনানিবাস থেকে ৬২৬ জন কীভাবে পালিয়ে গেলেন, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রয়োজন।”
এরপর, বিকেলে রাসেল আহমেদ আরও একবার মন্তব্য করেন, “এদিন সকালে নগরে মিছিল করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ। তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে, না হলে আমরা তাদের বিচার করব।”
সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম অনশনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন, তবে তারা তাদের দাবি নিয়ে অটল ছিলেন। এরপর জেলা প্রশাসকের ফোন থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের সঙ্গে কথা বলা হয়, কিন্তু শিক্ষার্থীরা অনশন ভাঙেননি।
রাত ৭টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু শিক্ষার্থীরা তাদের সিদ্ধান্তে অটল রইলেন।
শেষমেশ রাত ৯টার দিকে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম তাদের আশ্বস্ত করেন এবং তাদের হাতে জুস তুলে দেন। এই পরিশ্রমের পর, রাসেল আহমেদসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন ভাঙেন, তবে তারা তাদের দাবি আদায়ে তিন দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম জানান, “প্রায় সাড়ে ৯ ঘণ্টা ধরে শিক্ষার্থীরা সড়কেই বসে ছিলেন। তারা তিন দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন, আমরা সেটি মেনে নিয়েছি।”
এটি ছিল একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি এবং বিচারের পথে এগিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ছিল।