Dhaka ১১:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫
শিরোনাম :

শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ: এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন

  • Update Time : ১২:৫১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫
  • / 34

ট্রেন্ড বিডি নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ৫০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনটির শিরোনাম- ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। এইচআরডব্লিউর এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন দাবি করেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে শেখ হাসিনা এবং তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানতেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নিজেই এসব কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দিতেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বিশেষত,

  • গণগ্রেপ্তার ও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ করা,
  • আইন মেনে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা,
  • সমালোচকদের দমনের জন্য ব্যবহৃত আইন বাতিল করা,
  • বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা,
  • র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করা।

এছাড়া, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং জনপ্রশাসন, পুলিশ, সামরিক ও বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ

এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পিয়ারসন বলেন, “গুম ও হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।”

জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “র‌্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।”

গণগ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং তারা শাসক দলের ক্যাডারের মতো আচরণ করত।

গত ১৫ বছরে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা স্বাধীনভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে,

  • আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
  • গোপন আটককেন্দ্র চিহ্নিত করা,
  • আটকসংক্রান্ত সব মামলার পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সহায়তা গ্রহণের আহ্বান

এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে:

  • নির্বিচারে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করতে পুলিশের জন্য নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন,
  • প্রতিহিংসামূলক সহিংসতা বন্ধ করা,
  • রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত আইন বাতিল করা,
  • ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের স্বাধীন তদন্ত করতে জাতিসংঘের সহায়তায় কমিশন গঠন করা,
  • দমন-পীড়ন রোধে দ্রুত কাঠামোগত সংস্কার করা।

নতুন যুগের শুরু?

এইচআরডব্লিউর এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, “প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের একটি অধিকারের ভিত্তিতে সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

আগামী মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি ঐকমত্যের প্রস্তাব উত্থাপন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ: এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদন

Update Time : ১২:৫১:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ জানুয়ারী ২০২৫

ট্রেন্ড বিডি নিউজ ডেস্ক

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ৫০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনটির শিরোনাম- ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভল্যুশন: আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছে সংস্থাটি। এইচআরডব্লিউর এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন দাবি করেছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের বিষয়ে শেখ হাসিনা এবং তার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানতেন এবং অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নিজেই এসব কর্মকাণ্ডের নির্দেশ দিতেন।

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে কাঠামোগত সংস্কারের সুপারিশ

প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে। বিশেষত,

  • গণগ্রেপ্তার ও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ করা,
  • আইন মেনে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা,
  • সমালোচকদের দমনের জন্য ব্যবহৃত আইন বাতিল করা,
  • বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমে জড়িত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা,
  • র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করা।

এছাড়া, ক্ষমতার পৃথকীকরণ এবং জনপ্রশাসন, পুলিশ, সামরিক ও বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ

এইচআরডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, র‌্যাবের বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। পিয়ারসন বলেন, “গুম ও হত্যার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা জরুরি।”

জবাবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “র‌্যাব তাদের অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তবে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং গুমের জন্য দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।”

গণগ্রেপ্তার ও বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা বাহিনী রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ছিল এবং তারা শাসক দলের ক্যাডারের মতো আচরণ করত।

গত ১৫ বছরে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যা স্বাধীনভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে,

  • আটক ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা,
  • গোপন আটককেন্দ্র চিহ্নিত করা,
  • আটকসংক্রান্ত সব মামলার পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের সহায়তা গ্রহণের আহ্বান

এইচআরডব্লিউ বলেছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তর এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে কারিগরি সহায়তা গ্রহণ করলে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আরও উন্নত হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়

প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারকে:

  • নির্বিচারে গ্রেপ্তার নিষিদ্ধ করতে পুলিশের জন্য নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন,
  • প্রতিহিংসামূলক সহিংসতা বন্ধ করা,
  • রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত আইন বাতিল করা,
  • ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধের স্বাধীন তদন্ত করতে জাতিসংঘের সহায়তায় কমিশন গঠন করা,
  • দমন-পীড়ন রোধে দ্রুত কাঠামোগত সংস্কার করা।

নতুন যুগের শুরু?

এইচআরডব্লিউর এশিয়া পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, “প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, যা একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বাংলাদেশের একটি অধিকারের ভিত্তিতে সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

আগামী মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের অধিবেশনে বাংলাদেশে চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে একটি ঐকমত্যের প্রস্তাব উত্থাপন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।