শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত পোপা বদলাপাড়া: ৫৪ বছর পর প্রথম স্কুল পেল গ্রামটি

- Update Time : ০৪:৪১:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫
- / 85
শিক্ষার আলোয় উদ্ভাসিত পোপা বদলাপাড়া: ৫৪ বছর পর প্রথম স্কুল পেল গ্রামটি
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর, বান্দরবানের লামা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পোপা বদলাপাড়া গ্রামটি প্রথমবারের মতো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মুখ দেখল। এই গ্রামটি একেবারেই দুর্গম অঞ্চলে অবস্থিত, যেখানে বিদ্যুৎ, বিশুদ্ধ পানি, মোবাইল নেটওয়ার্ক কিংবা হাসপাতাল নেই। এর আশপাশে ২০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো বিদ্যালয়ও ছিল না।

এটি সম্ভব হয়েছে একজন স্বপ্নদ্রষ্টা তরুণের প্রচেষ্টায়, যার নাম উথোয়াইয়ই মারমা। ২০২৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তার উদ্যোগে পোপা বদলাপাড়ায় যাত্রা শুরু হয় প্রথম বিদ্যালয়ের। বর্তমানে, শিশুরা এখানে প্রথম শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করছে। বিদ্যালয়ে মোট ৩৯ জন শিক্ষার্থী এবং দুজন শিক্ষক রয়েছেন।

এ অঞ্চলের চিত্রটি দেশের অন্যান্য অনেক গ্রামের সঙ্গে মেলে না, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা কিংবা মৌলিক সুবিধা সহজলভ্য। পোপা বদলাপাড়া যেন একটি আলোর প্রদীপ হয়ে উঠেছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গেয়ে, লাল-সবুজের পতাকায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে।
এটি এমন এক দৃশ্য, যা দেশের উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। একদিকে যেমন এটি বাংলাদেশের জাতিগত একত্রীকরণ ও উদারতার প্রতিনিধিত্ব করে, তেমনি অন্যদিকে এসব গ্রামে শিক্ষার সুযোগের অভাব এবং সেই অভাব পূরণের এক অনন্য উদ্যোগও তুলে ধরে।

স্বাধীনতা অর্জনের ৫৪ বছর পর, যেখানে গ্রামগুলির অধিকাংশ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, সেখানে এমন উদ্যোগ এক নতুন আলো নিয়ে এসেছে। এবং এটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এমন আরও অনেক উদ্যোগ ও সুযোগের প্রয়োজন রয়েছে, যাতে একদিন আর কোনো গ্রাম, কোনো শিশু শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না থাকে।

এছাড়া, আমাদের শিক্ষার পরিবেশ সবার মাঝে ছড়াতে হবে। স্বাধীনতার পর এত বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু সৃজনশীলতা ও নতুনত্বের যুগে আমরা কতটা পিছিয়ে রয়েছি, এটি এক গভীর চিন্তার বিষয়। শিক্ষার সুযোগ সবার জন্য তৈরি করার পাশাপাশি, তরুণদের উৎসাহিত করে তাদের সৃজনশীলতাকে বাড়াতে হবে। এই প্রজন্মের সঠিক বিকাশের মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে পারি।
আমরা জানি, আমাদের বিকল্প কেউ নেই, এবং আমাদেরই এগিয়ে যেতে হবে। সুতরাং, এ ধরনের উদ্যোগ যেমন পোপা বদলাপাড়ার বিদ্যালয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ুক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।