তরুণদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল: পরিবারতন্ত্রের অবসান ও গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আহ্বান

- Update Time : ০৭:৫২:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / 29
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ঘোষণা দিয়েছেন যে তরুণদের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাওয়া নতুন রাজনৈতিক দলে কোনো ধরনের পরিবারতন্ত্র থাকবে না। তিনি বলেন, “বাপ নেতা হলে ছেলে নেতা হবে—এই পুরনো ধারা আর চলবে না। যোগ্যতা থাকলেই কেবল নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়া হবে।”
শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্যবৃন্দ’র ব্যানারে আয়োজিত এই সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীসহ বিভিন্ন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকরা উপস্থিত ছিলেন।
নতুন রাজনীতির ডাক
সারজিস আলম বলেন, “নতুন বাংলাদেশ গড়তে নতুন চিন্তাধারার রাজনীতি প্রয়োজন। সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যরা এই রাজনীতিতে ভ্যানগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভোটের রাজনীতিতে অংশ নিয়ে আপনারা চেয়ারম্যান, মেয়র, কাউন্সিলর বা এমপি-মন্ত্রী হয়ে উঠুন। এই রাজনীতি যেন জনগণের রাজনীতি হয়।”
তিনি আরও যোগ করেন, “চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও ঘুষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। শেখ হাসিনার ১৬ বছরের শাসনামলে যে সিস্টেম গড়ে উঠেছে, তা প্রতিহত করতে হবে। অতীতের রাজনৈতিক শক্তিগুলো এই সিস্টেম জারি রাখতে চায়। ঐক্যবদ্ধভাবে এই সিস্টেমকে ভেঙে ফেলতে হবে।”
সশস্ত্র বিপ্লবের হুমকি
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সতর্ক করে বলেন, “তরুণদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি বাধাগ্রস্ত করলে সশস্ত্র বিপ্লব অনিবার্য হবে। শেখ হাসিনার পতনের আগেই সশস্ত্র বিপ্লবের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, এবং সেই ঘোষণা এখনো বহাল আছে। কোনো রাজনৈতিক দল বা বিদেশি শক্তি তরুণদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে বাধা দিলে বিপ্লবের পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন তারা।”
তিনি আরও বলেন, “পুরোনো রাজনীতি আর চলবে না। ক্যাম্পাসে অস্ত্রের ঝনঝনানি শোনা যাচ্ছে। ছাত্রসংগঠনগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। নতুবা ছাত্রলীগের মতো অবস্থা হবে, এবং আমরা তাদের রক্ষা করতে পারব না।”
সংবিধান সংশোধন ও গণপরিষদ গঠনের আহ্বান
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সংবিধান সংশোধনের জন্য গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “গণপরিষদ সংবিধান প্রণয়ন করবে, এবং পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে।”
সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা
সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তারা এই নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগে সমর্থন জানান। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রুকন উদ্দিন বলেন, “ছাত্রনেতৃত্বের ওপর শকুনের থাবা ওত পেতে আছে। তাদের নানাভাবে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। অবৈধ টাকা ছড়াচ্ছে পতিত ফ্যাসিবাদ। এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।”
অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন খালেদ হোসাইন আশা প্রকাশ করেন যে তরুণদের দল ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে। অবসরপ্রাপ্ত মেজর গোলাম হায়দার তরুণদের যে কোনো উদ্যোগে পাশে থাকার ঘোষণা দেন।
শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা
মতবিনিময় সভায় বক্তারা শেখ হাসিনা সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন, “শেখ হাসিনার শাসনামলে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা হয়েছে। ভারতীয় আধিপত্যবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ধ্বংস করা হয়েছে। তরুণেরাই এ ব্যবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে পারবে।”
উপসংহার
জাতীয় নাগরিক কমিটির এই উদ্যোগ তরুণদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। পরিবারতন্ত্রের অবসান, যোগ্যতা ভিত্তিক নেতৃত্ব এবং গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের আহ্বান এই নতুন রাজনৈতিক দলের মূল লক্ষ্য। তবে এই পথে চ্যালেঞ্জও কম নয়। তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সংগ্রামে এগিয়ে যেতে হবে।
এই নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের রাজনীতিতে কী ধরনের পরিবর্তন আনতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে এটা স্পষ্ট যে তরুণদের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্বে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
ট্রেন্ডবিডিনিউজ প্রতিবেদন