Dhaka ১১:৩৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫
শিরোনাম :

ভ্যালেন্টাইনস ডে: ভালোবাসার উৎসব নাকি অপসংস্কৃতির প্রভাব

  • Update Time : ০৩:০৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / 71

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে পালিত হয়। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই দিনটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হলেও, এটি নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক ও মতবিরোধ। সম্প্রতি, আলোচিত ইসলামিক বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন প্রসঙ্গে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি একে ‘অপসংস্কৃতি’ হিসেবে উল্লেখ করে মুসলিম তরুণ-তরুণীদের এই দিনটি বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহর প্রতিক্রিয়া

শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, ভ্যালেন্টাইনস ডে আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়, বরং এটি পাশ্চাত্যের একটি ঐতিহ্য, যা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘এই অপসংস্কৃতি বর্জন করুন, পবিত্র জীবন যাপন করুন।’’

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ধন-সম্পদ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে পশ্চিমারা আমাদের থেকে এগিয়ে থাকলেও, সুখী দাম্পত্য জীবন ও টেকসই পরিবার ব্যবস্থাপনায় মুসলিম সমাজ এগিয়ে রয়েছে। তবে, গত কয়েক দশকে বিভিন্ন চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের আবেগকে ব্যবহার করে ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে সেই চক্রান্তের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং সামাজিক বাস্তবতা

সমাজের একটি অংশ মনে করে, ভালোবাসার প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় এবং তা হতে হবে নৈতিকতার ভিত্তিতে। তরুণ সমাজের আবেগকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ ১৪ ফেব্রুয়ারির ‘উন্মাদনা’ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শায়খ আহমাদুল্লাহ তার পোস্টে আরও বলেন, ‘‘যারা তরুণদের প্রশংসনীয় ‘লাজ’ দূর করতে চায়, ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের থেকে দূরে থাকা উচিত।’’ তিনি সতর্ক করে বলেন, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে জীবনে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, যা সমাজে নানা রকমের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয়।

অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান

শায়খ আহমাদুল্লাহ অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে সময় কাটায়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তিনি অভিভাবকদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘আপনার সন্তান যেন সর্বনাশের পথে না যায়, সে বিষয়ে আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হোন, তবে ভালোবাসা ও সচেতনতার মাধ্যমে সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।’’

ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব

অনেকেই যুক্তি দেন যে, ভালোবাসা মানুষের সহজাত অনুভূতি এবং এটি উদযাপনে দোষের কিছু নেই। তবে, শায়খ আহমাদুল্লাহ মনে করেন, ভালোবাসা শুধুমাত্র বৈধ ও সঠিক পথে প্রকাশ করাই উচিত। আবেগের বশবর্তী হয়ে যদি কেউ অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি পরবর্তীতে নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

উপসংহার

ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করা উচিত কি না, এটি বিতর্কের বিষয়। কেউ একে ভালোবাসার দিন হিসেবে দেখে, আবার কেউ এটিকে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে করে। তবে, যে কোনো উৎসব বা উদযাপন যেন আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।

তরুণ প্রজন্মের উচিত তাদের আবেগকে সংযত রাখা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করা। পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাই হতে পারে সত্যিকারের সুস্থ ও সুন্দর ভালোবাসার প্রতিচিত্র।

আপনার সোশ্যাল মিডিয়া এই পোস্ট শেয়ার করুন

Cricket Update

ভ্যালেন্টাইনস ডে: ভালোবাসার উৎসব নাকি অপসংস্কৃতির প্রভাব

Update Time : ০৩:০৫:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে পালিত হয়। তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এই দিনটি বিশেষভাবে জনপ্রিয় হলেও, এটি নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক ও মতবিরোধ। সম্প্রতি, আলোচিত ইসলামিক বক্তা ও আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন প্রসঙ্গে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি একে ‘অপসংস্কৃতি’ হিসেবে উল্লেখ করে মুসলিম তরুণ-তরুণীদের এই দিনটি বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন।

শায়খ আহমাদুল্লাহর প্রতিক্রিয়া

শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, ভ্যালেন্টাইনস ডে আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়, বরং এটি পাশ্চাত্যের একটি ঐতিহ্য, যা আমাদের সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘‘এই অপসংস্কৃতি বর্জন করুন, পবিত্র জীবন যাপন করুন।’’

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, ধন-সম্পদ ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে পশ্চিমারা আমাদের থেকে এগিয়ে থাকলেও, সুখী দাম্পত্য জীবন ও টেকসই পরিবার ব্যবস্থাপনায় মুসলিম সমাজ এগিয়ে রয়েছে। তবে, গত কয়েক দশকে বিভিন্ন চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তরুণ-তরুণীদের আবেগকে ব্যবহার করে ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে সেই চক্রান্তের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

ভ্যালেন্টাইনস ডে এবং সামাজিক বাস্তবতা

সমাজের একটি অংশ মনে করে, ভালোবাসার প্রকাশের জন্য একটি বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিনই ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় এবং তা হতে হবে নৈতিকতার ভিত্তিতে। তরুণ সমাজের আবেগকে পুঁজি করে একশ্রেণির মানুষ ১৪ ফেব্রুয়ারির ‘উন্মাদনা’ সৃষ্টি করে, যা পরবর্তীতে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

শায়খ আহমাদুল্লাহ তার পোস্টে আরও বলেন, ‘‘যারা তরুণদের প্রশংসনীয় ‘লাজ’ দূর করতে চায়, ধর্মীয় মূল্যবোধকে ধ্বংস করতে চায়, তাদের থেকে দূরে থাকা উচিত।’’ তিনি সতর্ক করে বলেন, অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে জীবনে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, যা সমাজে নানা রকমের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্ম দেয়।

অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান

শায়খ আহমাদুল্লাহ অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের সন্তান কোথায় যায়, কার সঙ্গে সময় কাটায়, সে বিষয়ে সচেতন হতে হবে। তিনি অভিভাবকদের সতর্ক করে বলেন, ‘‘আপনার সন্তান যেন সর্বনাশের পথে না যায়, সে বিষয়ে আপনাকেই খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে কঠোর হোন, তবে ভালোবাসা ও সচেতনতার মাধ্যমে সন্তানদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন।’’

ভ্যালেন্টাইনস ডে নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব

অনেকেই যুক্তি দেন যে, ভালোবাসা মানুষের সহজাত অনুভূতি এবং এটি উদযাপনে দোষের কিছু নেই। তবে, শায়খ আহমাদুল্লাহ মনে করেন, ভালোবাসা শুধুমাত্র বৈধ ও সঠিক পথে প্রকাশ করাই উচিত। আবেগের বশবর্তী হয়ে যদি কেউ অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, তবে সেটি পরবর্তীতে নানা সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

উপসংহার

ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করা উচিত কি না, এটি বিতর্কের বিষয়। কেউ একে ভালোবাসার দিন হিসেবে দেখে, আবার কেউ এটিকে সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের পরিপন্থী বলে মনে করে। তবে, যে কোনো উৎসব বা উদযাপন যেন আমাদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলার পরিপন্থী না হয়, সেদিকে সবাইকে নজর দিতে হবে।

তরুণ প্রজন্মের উচিত তাদের আবেগকে সংযত রাখা এবং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বিবেক-বুদ্ধি ব্যবহার করা। পরিবার, সমাজ ও ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকাই হতে পারে সত্যিকারের সুস্থ ও সুন্দর ভালোবাসার প্রতিচিত্র।